কন্যা প্রিয়ম্বদা দে, স্ত্রী রোমি দে, বৌদি সুদেষ্ণা দে-কে তিনিই হত্যা করেছেন বলে আগে দাবি করেছিলেন ট্যাংরার প্রসূন দে। তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেফতারির পরে পুলিশি জেরায় এ বার প্রসূন জানিয়েছেন, ঠিক কী ভাবে তিন জনকে খুন করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের ওই অংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রসূনের স্ত্রী রোমি তাঁর কিশোরী কন্যার পা চেপে ধরেছিলেন বলে প্রসূন জেরায় দাবি করেছেন। তখন তিনি প্রিয়ম্বদার মুখে বালিশ চেপে ধরেছিলেন। এর পরে একে একে স্ত্রী রোমি এবং বৌদি সুদেষ্ণাকেও খুন করেন প্রসূন।
ট্যাংরার অটল শূর রোডের বাড়ি থেকে তিন মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। প্রসূন আগে দাবি করেছিলেন, তিন জনকেই তিনি খুন করেছিলেন। জেরায় প্রসূন দাবি করেছেন, প্রিয়ম্বদাকে খুনের পরে রোমিকেও হত্যা করেন তিনি। রোমি প্রথমে নিজের হাত কেটেছিলেন। তাতে ‘কার্যসিদ্ধি’ না হওয়ায় প্রসূন গিয়ে রোমির হাত আর গলা কেটেছিলেন। সেই সময় তাঁর চিৎকার যাতে বাইরে না পৌঁছোয়, সে জন্য রোমির মুখেও বালিশ চাপা দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন তদন্তকারীদের ওই সূত্র। সুদেষ্ণা তাঁর ঘরে এসে রোমির এই অবস্থা দেখেন। এর পরে বৌদি সুদেষ্ণাকেও একই ভাবে তিনি খুন করেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন প্রসূন।
তদন্তকারীদের ওই সূত্রে জানা গিয়েছে , প্রসূন দাবি করেছেন, তিন মহিলাকে খুনের পরে প্রসূন উপরের তলা থেকে কিশোর প্রতীপকে নিয়ে আসেন প্রিয়ম্বদার ঘরে । ওই ঘরেই প্রতীপের হাত কাটা হয় বলে তাঁর দাবি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরে প্রসূন নিজের হাত কেটে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলের দিকে তিনি ঘুম থেকে ওঠেন। তার পরে সেই রাতে প্রণয় এবং প্রতীপের সঙ্গে গাড়িতে চেপে প্রসূন বেরিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা।
পুলিশের কাছে দেওয়া প্রণয়, প্রসূনের বয়ান থেকেই জানা গিয়েছে, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেয়েছিলেন পরিবারের ছ’জন। তার পরে কী হয়েছিল, গ্রেফতারির পরে পুলিশি জেরায় প্রসূন তা জানিয়েছেন। তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রসূনের দাবি, ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রথমে তিনি ঘুম থেকে উঠেছিলেন। তার পরে উঠেছিলেন তাঁর স্ত্রী রোমি। এর পরে একে একে ঘুম থেকে উঠেছিলেন দাদা প্রণয়, তাঁর স্ত্রী সুদেষ্ণা। এর পরেই আত্মহত্যার জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করেন দুই ভাই এবং তাঁদের স্ত্রীরা। তাঁরা স্থির করেন, দ্বিতীয় বার কেউ আত্মহত্যা করতে না-পারলে পরিবারের অন্য সদস্য তাঁকে সাহায্য করবেন। এমনটাই বলছে পুলিশের ওই সূত্র। জেরায় আরও জানা গিয়েছে যে, দে পরিবারের গাড়ি বাবদ ৪৭ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে। বাজারে প্রায় ১৬ কোটি টাকা মতো ধার রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রণয়, প্রসূন দাবি করেছেন, এই ঋণের কারণেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। তাতে রাজি হয়েছিলেন দু’জনের স্ত্রীও। যদিও সন্তানেরা এই বিষয়ে কিছু জানতেন না বলেই দাবি।