আবার উত্তপ্ত সিরিয়া। গত বছর ডিসেম্বরে সেখানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার পড়ে গিয়েছিল। প্রায় দেড় দশকের গৃহযুদ্ধের পর গত ৮ ডিসেম্বর আসাদের সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী দামাস্কাস দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী। তার পর সিরিয়ায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এখনও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আসাদ রাশিয়ায় চলে গিয়েছেন। কিন্তু সিরিয়ার সেই অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর অনুগামীদের সংঘাত চলছে। দু’দিন ধরে সেই সংঘাত প্রবল আকার নিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে হাজারের বেশি মানুষের।
আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় তাঁর অনুগামীরা প্রত্যাঘাত হেনেছেন। দেশ জুড়ে ‘প্রতিশোধ-হত্যা’ চালাচ্ছেন তাঁরা। সরকারি আধিকারিকেরাই মূলত তাঁদের ‘টার্গেট’। তবে বহু সাধারণ নাগরিকের প্রাণ যাচ্ছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায় বৃহস্পতিবার থেকে। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী এক অভিযুক্তকে ধরতে জাবলেহ্তে অভিযান চালিয়েছিল। আসাদ- অনুগামীরা তাদের উপর হামলা চালান বলে অভিযোগ। ক্রমে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে। ব্রিটেনে অবস্থিত সিরিয়ার পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে এখনও পর্যন্ত সিরিয়ায় ৭৪৫ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের অধিকাংশকেই মারা হয়েছে খুব কাছ থেকে আঘাত করে। এগুলিকে ‘প্রতিশোধ-হত্যা’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। অভিযোগ, আসাদ সরকারের পতনের প্রতিশোধ নিতে ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁর অনুগামীরা হামলা চালাচ্ছেন। এ ছাড়াও, গত দু’দিনে সিরিয়ায় ১২৫ জন সরকারি ও নিরাপত্তা আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছে। সরকারপক্ষের পাল্টা হামলায় নিহত হয়েছেন আসাদের অন্তত ১৪৮ জন অনুগামী।
দেশ জুড়ে সংঘাতের আবহে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন। লাটাকিয়া প্রদেশের বড় অংশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। মিলছে না পানীয় জলও। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন না কেউ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বন্দুকধারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামনে কাউকে পেলে আগে তাঁর পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে। তার পর তাঁকে মেরে ফেলা হচ্ছে। রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মৃতদেহের স্তূপ।
সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। নাগরিকদের উপর হামলার নিন্দা করেছে তারা। যদিও সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আসাদ বাহিনীর হাত থেকে অনেক এলাকা দখলমুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
ডিসেম্বরে আসাদের সরকারের পতনের পর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শীর্ষনেতা আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন আর এক বিদ্রোহী নেতা মহম্মদ আল-বশির। বলা হয়েছিল, চার বছরের মধ্যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। পরে গত জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বিদ্রোহী নেতা তথা আল কায়দার প্রাক্তন নেতা আহমেদ আল-শারা।