বর্ষা চলে এল বঙ্গে। বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে, তার হাত ধরে স্বাভাবিক সময়ের আগেই, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করল মৌসুমি বায়ু। এখন অপেক্ষা শুধু দক্ষিণবঙ্গে।
সাধারণত জুন মাসের ৮ তারিখ নাগাদ উত্তরবঙ্গে বর্ষা প্রবেশ করে। এ বার তা মে মাসেই প্রবেশ করল। গত বছরও ৩১ মে তারিখে বর্ষা প্রবেশ করেছিল বাংলায়। তবে ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রতিবারই জুন মাসে বর্ষা এসেছে। ২০২০ এবং ২০২৩ সালে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে খানিক দেরিও হয়েছিল বর্ষার প্রবেশে। ওই দু’বছরই বর্ষা প্রবেশ করেছিল ১২ জুন।
এর আগে শেষ বার ২০০০ সালে ২৯ মে তারিখে বর্ষা এসেছিল বাংলায়। তার পর ২০০৬, ’০৯ এবং ’১৩ সালে রাজ্যে বর্ষার আগমন মে মাসে ঘটেছিল।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গে ঢুকেই প্রথম চার দিন ব্যাপক দাপট দেখাবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। তার ফলে উত্তরবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে কালিম্পং, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারের জন্য।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বুধবারই বলেছিলেন, ‘‘বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জন্যই উত্তরবঙ্গে বর্ষা অন্তত ১২-১৩ দিন এগিয়ে এসেছে। প্রথম দফায় অন্তত ৪-৫ দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।’’
আবার আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগর তৈরি হওয়া অনেক নিম্নচাপই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। কিন্তু এ বারের নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল মৌসুমি বায়ুর অগ্রগতি। এক দিকে নিম্নচাপটি স্থলভাগের কাছাকাছি তৈরি হওয়ায় সমুদ্রে বেশি ক্ষণ থাকতে পারেনি। ফলে শক্তিও সঞ্চয় করতে পারেনি সমুদ্র থেকে। আবার সাগরে মৌসুমি বায়ুর দ্রুত অগ্রসর হওয়াও ঘূর্ণিঝড় তৈরির প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে মৌসম ভবনের বুলেটিনে জানানো হয়েছে গভীর নিম্নচাপটি শক্তি হারিয়ে আগামী ১২ ঘণ্টায় সাধারণ নিম্নচাপে পরিণত হবে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপ অঞ্চলে পরিণত হবে।
বুধবার আবহাওয়া দফতরের তরফে একটি বিশেষ বুলেটিন জারি করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বৃহস্পতিবার। একই সঙ্গে মালদহ, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। শুক্রবারও একই পরিস্থিতি থাকবে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। পাহাড় এবং পাদদেশের জেলা ছাড়াও সমতলের প্রায় সব জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। ফলে পাহাড়ি নদীগুলির উপরে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া ধসপ্রবণ এলাকায় চলাচল সাবধানে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের তরফেও।