‘মা, আমি চুরি করিনি’: পাঁশকুড়ার সেই কিশোরকে কান ধরে ওঠবস করানো দোকানির বিরুদ্ধে দায়ের এফআইআর

দোকান থেকে চিপ্‌সের প্যাকেট চুরির অভিযোগে বছর তেরোর কিশোরকে রাস্তায় সকলের সামনে কান ধরে ওঠবস করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পরিবারের দাবি, চোর অপবাদ দেওয়ার পরে সেই কিশোর আত্মহত্যা করেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার ওই ঘটনায় অভিযুক্ত দোকানদারের বিরুদ্ধে এ বার এফআইআর দায়ের হল। রবিবার কিশোরটির পরিবার পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তার ভিত্তিতে রুজু হয় মামলা। অভিযুক্ত সেই দোকানদার পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ারও।

পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছিল। মৃত ছাত্রের নাম কৃষ্ণেন্দু দাস। স্থানীয় বাকুলদা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত সে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত রবিবার শুভঙ্কর দীক্ষিত নামে এক ব্যক্তির মিষ্টির দোকান থেকে তিনটে চিপ্‌সের প্যাকেট চুরির অভিযোগ উঠেছিল কৃষ্ণেন্দুর বিরুদ্ধে। যদিও স্থানীয়দের দাবি, চিপ্‌সের প্যাকেটগুলি হাওয়ায় উড়ে গিয়েছিল। সেই সময় রাস্তা দিয়ে সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিল কৃষ্ণেন্দু। সে বুঝতে পারেনি প্যাকেটগুলি কোথা থেকে এসেছে। রাস্তায় পড়ে রয়েছে ভেবে সে কুড়িয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। তা দেখতে পেয়েই কিশোরকে ধরেন শুভঙ্কর। চিপ্‌সের প্যাকেট চুরির জন্য তিনি কৃষ্ণেন্দুকে তিরস্কারও করেন। তাকে বাধ্য করেন কান ধরে ওঠবস করতে। এর পরেই ওই কিশোর দোকানদারকে চিপ্‌সের প্যাকেটের জন্য ২০ টাকা দেয়। দোকানদার ফেরতও দেন পাঁচ টাকা। ওই ঘটনার কথা লোকমুখে জানতে পেরে কৃষ্ণেন্দুর মা আবার ছেলেকে শুভঙ্করের দোকানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ছেলেকে বকাবকিও করেন তার মা। পরিবারের দাবি, ওই ঘটনার পরেই বাড়ি ফিরে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করে কৃষ্ণেন্দু।

কিশোরকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল। পরিবার সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ হাসপাতালে মৃত্যু হয় কৃষ্ণেন্দুর।

শুভঙ্করের দোকানের সিসিটিভি ফুটেজও পরে প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, দোকানের সামনে সিঁড়িতে পড়ে থাকা সবুজ রঙের চিপ্‌সের প্যাকেট কুড়িয়ে নিচ্ছে কৃষ্ণেন্দু। সে প্রথম থেকে তা-ই দাবি করে এসেছিল। বার বার বলেছিল, সে দোকান থেকে চিপসের প্যাকেট চুরি করেনি, কুড়িয়ে পেয়েছে। সুইসাইড নোটেও সে লিখেছিল, ‘‘মা, আমি চুরি করিনি।’’

যদিও কৃষ্ণেন্দুর কথা মানেননি দোকানদার। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই যুবক তাকে বকাবকি ও কান ধরে ওঠবস করিয়েছেন। কৃষ্ণেন্দুর মা-ও অভিযোগ শুনে দোকানে গিয়ে সকলের সামনে ছেলেকে চড় মেরে শাসন করেছিলেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও তা দেখা গিয়েছে।

রবিবার বিকেলে স্থানীয় মহিলারা গলায় চিপ্‌সের প্যাকেট ঝুলিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন। এর পরেই কিশোরের মা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কৃষ্ণেন্দুর বাড়িতে গিয়েছে কংগ্রেস প্রতিনিধিদলও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.