ইরানে যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারল না মোহনবাগান, বল আন্তর্জাতিক আদালতে, শিল্ড খেলতে রাজি সবুজ-মেরুন

সেপাহানের বিরুদ্ধে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর ম্যাচ খেলতে সম্ভবত ইরানে যাচ্ছে না মোহনবাগান। শনিবার ক্লাবের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইরানে যাওয়া নিয়ে ফুটবলার এবং পরিবারদের আপত্তি থাকায় বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেপাহানের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তারা আবেদন করেছে ‘কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টস’ (ক্যাস) বা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে। ম্যাচ ৩০ সেপ্টেম্বর। ফলে আগামী তিন দিনের মধ্যে ক্যাস সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না তা বোঝা যাচ্ছে না। সূত্রের খবর, নিরাপত্তাজনিত কারণে মোহনবাগান যে ইরানে যেতে চাইছে না সেই সিদ্ধান্ত দলের অন্দরে নেওয়া হয়ে গিয়েছে।

গত বছর মোহনবাগানের গ্রুপেই ছিল ইরানের ক্লাব ট্র্যাক্টর এফসি। তখন ইজ়রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চলছিল ইরানের। পরিস্থিতিও উত্তপ্ত ছিল। নিরাপত্তার কারণে দেখিয়ে ইরানে যেতে রাজি হয়নি তারা। এর পরেই এএফসি জানিয়ে দেয়, মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২ থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

এ বছর পরিস্থিতি অনেক শান্ত। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তাহীনতার যুক্তি দেখিয়ে মোহনবাগান ইরানে যেতে অস্বীকার করছে বলে জানা গিয়েছে। এএফসি-কে তারা মাঠ বদলের অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। যদি ক্যাস মোহনবাগানকে নির্দেশ দেয় ইরানে খেলতে যাওয়ার এবং মোহনবাগান তা না মানে,তা হলে আবারও নির্বাসিত হতে পারে তারা।

ভারতীয় ফুটবলের জন্যও বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে। এএফসি-র নিয়ম অনুযায়ী, গত দু’বছর ধরে ভারতের সর্বোচ্চ লিগজয়ী (আইএসএল) দলকে সরাসরি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ পর্বে খেলার সুযোগ দেওয়া হত। মোহনবাগান টানা দু’বার নাম তুলে নেওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ পর্বে সরাসরি আর হয়তো ভারতের কোনও ক্লাবকে খেলতে দেবে না এএফসি। প্লে-অফ খেলে যোগ্যতা অর্জন করতে হতে পারে। পুরোটাই নির্ভর করছে এএফসি-র উপর।

মোহনবাগানের চার অস্ট্রেলীয় ফুটবলার, জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিংস, দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং টম অলড্রেড যে ইরানে যেতে চান না তা আগেই জানা গিয়েছিল। বাকি দুই বিদেশি আলবের্তো রদ্রিগেস এবং রবসন রোবিনহোও ইরানে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন। দেশীয় ফুটবলারদের নিয়ে ম্যাচ খেলাই যেত। তবে ছয় বিদেশিকে ছাড়াই বিদেশের মাঠে শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলতে দল পরিচালন সমিতি রাজি হয়নি বলে সূত্রের খবর।

দু’বছর আগে মুম্বই সিটি এফসি-কেও একই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। ইরানের অশান্ত পরিস্থিতির মাঝে তাদের খেলতে যেতে হত নাসাজি মাজান্দারানের বিরুদ্ধে। বিদেশিরা রাজি না হওয়ায় দেশীয় ফুটবলারদের নিয়েই ইরানে যায় মুম্বই। ম্যাচটি হারলেও মুম্বইয়ের দায়বদ্ধতা প্রশংসা কেড়ে নেয়। মোহনবাগান সে পথে হাঁটতে রাজি নয়।

প্রশ্ন উঠছে, মরসুমের শুরু থেকেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-কে গুরুত্ব দিয়েছিল মোহনবাগান। তারা জাতীয় শিবিরে ফুটবলার ছাড়তেও রাজি হয়নি। টানা অনুশীলন করেছে। তার পরেও কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে? কেউই এর উত্তর দিতে পারেননি।

এ দিনই সমাজমাধ্যমে তারা জানিয়েছে, আসন্ন আইএফএ শিল্ডে খেলতে তারা রাজি। নিজেদের মাঠের পাশাপাশি যুবভারতী এবং কিশোর ভারতীতে খেলতে চায় তারা। আগে শোনা গিয়েছিল, জাতীয় দলে ফুটবলার ছাড়তে হবে বলে শিল্ডে খেলবে না তারা। কিন্তু ভারতের পরের ম্যাচটি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলা। ফিফা উইন্ডোর মধ্যে পড়ে। মোহনবাগানকে ফুটবলার ছাড়তেই হবে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। জানা গিয়েছে, মোহনবাগান দরকারে রিজ়ার্ভ দলকে নিয়েই শিল্ডে খেলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.