পাঁচ বছর আগের পরীক্ষিত পথেই হাঁটতে চান মোদী, দু’দিনের মহা-সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু গেরুয়া শিবিরে

লোকসভা নির্বাচনের আগে মহা-সম্মেলন। ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে সেই বছরের জানুয়ারি মাসে দিল্লির রামলীলা ময়দানে জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল বিজেপির। এ বার লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের একই ভাবে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় অধিবেশন করতে চলেছে বিজেপি। শুরুটা নিয়মমাফিক হবে সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার বক্তৃতা দিয়ে। আর শেষ হবে ভোটের লড়াইয়ে নামার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ভোকাল টনিক’ দিয়ে। পাঁচ বছর আগে এমন সম্মেলনের পরে নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। সেই পরীক্ষিত পথেই এ বারেও ভোটের আগে আগে রাষ্ট্রীয় অধিবেশনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ৪০০-র বেশি আসন জেতার লক্ষ্য আগেই ঘোষণা করেছে বিজেপি। ২০১৯ সালে শেষ বার যখন বিজেপির রাষ্ট্রীয় অধিবেশন হয়েছিল তখন দলের ২৮২ জন সাংসদ ছিল। আর এখন সাংসদ সংখ্যা ৩০৩। দেশের ১২টি রাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী। আরও ছ’টি রাজ্যে বিজেপির সমর্থনে সরকার। ফলে পাঁচ বছর আগের অধিবেশনের থেকেও এ বারের আয়োজন অনেক বড়। ঠিকানাও বদলাচ্ছে। দিল্লির প্রগতি ময়দানে জি-২০ সম্মেলনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ভারত মণ্ডপম তৈরি করেছে সেখানেই বসবে অধিবেশন।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে ওই অধিবেশনে যোগ দেবেন দেশের আট হাজারের মতো বিজেপি নেতা। কাদের যেতে হবে সেই নির্দেশ এসে গিয়েছে বাংলাতেও। ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারির ওই অধিবেশন জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যরা যোগ দেবেন। বাংলার রয়েছেন সাত জন। এ ছাড়াও জাতীয় পরিষদের সদস্যেরাও থাকবেন। তাঁদের মধ্যে বাংলার ৪২ জন। ডাক পেয়েছেন রাজ্যের ১৬ লোকসভা সাংসদ ও একমাত্র রাজ্যসভা সাংসদ অনন্ত রায়। অনেকগুলি পদে থাকার দৌলতেই যাবেন সাংসদ ও রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ডাক পেয়েছেন দিলীপ ঘোষ। আবার প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হিসাবে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার কথা তথাগত রায়, রাহুল সিংহের। বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু অধিকারী জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। তবে তাঁকে নিয়ে ৬৮ জন বিধায়ককেও ডাকা হয়েছে রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে।

প্রত্যেক রাজ্য থেকেই একই স্তরের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। রাজ্য কমিটির পদাধিকারীরা ছাড়াও ডাক পেয়েছেন রাজ্যের কোর কমিটির সদস্যরা। বাংলার যে কমিটিতে রয়েছেন মিঠুন চক্রবর্তী। আবার শৃঙ্খলারক্ষা, অর্থ, নির্বাচন কমিটির সদস্যদেরও ডাকা হয়েছে। এর পরে প্রতিটি লোকসভা ইনচার্জ, কনভেনার এবং বিস্তারকদের যেতে হবে। বাংলার ক্ষেত্রে যে সংখ্যাটা ১২৬ জন। এ ছাড়াও রাজ্যে লোকসভা আসন ধরে বিজেপির যে ১১টি ক্লাস্টার তার প্রধানরাও যাবেন। যেতে হবে প্রতিটি জো়ন ও বিভাগের প্রধানকেও। জাতীয় মুখপাত্র হিসাবে ডাক পেয়েছেন ভারতী ঘোষ। প্রাক্তন সাংসদ হিসাবে ডাক পেয়েছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, স্বপন দাশগুপ্ত। এ ছাড়াও বিজেপির সাতটি মোর্চার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের যেতে হবে। ডাক পেয়েছেন রাজ্যের প্রতিটি শাখার প্রধান এবং প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৪৩। প্রতিটির সভাপতি মিলিয়ে রাজ্য থেকে কমপক্ষে ২০০ জনের ডাক রয়েছে রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে।

পাঁচ বছর আগে এই রাজ্যে বিজেপির সাংসদ সংখ্যা ছিল মাত্রই দুই। বিধায়ক সংখ্যা ছিল তিন। এ বার রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে বিজেপির সর্বভারতীয় চেহারাটা যেমন অনেক বড় তেমন বাংলার অংশগ্রহণও অনেকটা বেশি। গত রাষ্ট্রীয় অধিবেশনের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘দু’দিনের এই সম্মেলন আদতে প্রশিক্ষণ। কী ভাবে নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে হবে সেটা থেকে প্রচারের সুর কেমন হবে সবটাই স্পষ্ট করে দেওয়া হবে রাষ্ট্রীয় অধিবেশনে। পথ দেখাবেন অমিত শাহজিও। তবে সবার উপরে থাকবে মোদীজির বক্তব্য। যেটা আমাদের দলে সব নেতার কাছেই নির্দেশ এবং প্রেরণা।’’ রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁদের অধিবেশনে যাওয়ার কথা তাঁদের প্রত্যেককে যাওয়া আসার ব্যবস্থা নিজেদের করতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে ১০০ টাকা দিয়ে নেতাদের রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশও দিয়েছে দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.