বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে বহুদিন ধরে যে মামলা দিল্লি হাই কোর্টে চলছিল, তার রায় প্রকাশ করা হয় গতকাল। দুই সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে রায় দেন এবং আবেদনকারীকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার অনুমতি দেন। মামলার রায়ে উচ্চ আদালতের বিচারপতি রাজীব শকধেরের বক্তব্য, ‘ভারতীয় দণ্ডবিধিতে এটি ব্যতিক্রম। স্ত্রীদের অসম্মতিতেও স্বামীরা যে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারেন, এই বিষয়টি ‘নৈতিকভাবে বিরোধী’। তিনি বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে গণ্য করার পক্ষে রায় দিয়ে বলেন, ‘জটিল সামাজিক সমস্যাগুলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আদালতের দায়িত্ব এবং সেগুলিকে আমরা পাশ কাটিয়ে যেতে পারি না।’
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারার ২ নং ব্যতিক্রম তুলে ধরে বিচারপতি শকধের নিজের রায়ে বলেন, ‘যৌনকর্মীরা আইনত না বলতে পারেন, তবে বিবাহিত স্ত্রী তা পারেন না। যদি কোনও মহিলার স্বামী তার স্ত্রীর গণধর্ষণে যুক্ত থাকে, তাহলে সে সম্পর্কের খাতিরে পার পেয়ে যাবে। অন্য অভিযুক্ত ধর্ষণের সাজা ভোগ করলেও ধর্ষণকারী স্বামীর কিছুই হবে না।’
বিচারপতি শরধের বলেন, ‘এই জঘন্য সাধারণ আইন এমন মতবাদকে স্বীকৃতি দেয় যে একজন বিবাহিত মহিলা নিজের যৌন অধিকার হারায় এবং তিনি সম্পত্তি ছাড়া কিছুই নন।’ বিচারপতি বলেন, এভাবে সেই নারীকে সংবিধানের প্রদান করা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘স্বামীরযৌন নিপীড়নকে ধর্ষণ বলে আখ্যায়িত করা দরকার।’ উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিজের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত না হলেও এটিকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের পর্যায়ে ফেলা হয়। শরীরই হোক কিংবা আত্মপরিচয়, স্ত্রীর কোনও কিছুর উপরই কর্তৃত্ব ফলাতে পারেন না স্বামী। স্ত্রীর শরীরকে স্বামী যদি নিজের সম্পত্তি ভাবেন এবং তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাহলে সেটা বৈবাহিক ধর্ষণ ছাড়া আর কিছুই নয়।’