রাষ্ট্রপতি শাসনেও শান্ত হয়নি মণিপুর! সারা রাজ্যে বৃদ্ধি হল আফস্পার মেয়াদ, অরুণাচল, নাগাল্যান্ডের একাংশেও জারি

মণিপুরে চলছে রাষ্ট্রপতি শাসন। কিন্তু অশান্তি থামার নাম নেই। ইম্ফল, চুরাচান্দপুর-সহ একাধিক জেলায় সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই আবহে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য জুড়ে ‘সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন’বা আফস্পার (আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল। রবিবার এই ঘোষণা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জারি করা একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাঁচটি জেলার ১৩ টি থানা এলাকা বাদ দিয়ে গোটা রাজ্যেই আফস্পার মেয়াদ বৃদ্ধি হচ্ছে। এর মধ্যে কোনও কোনও জায়গায় নতুন করেও ওই আইন বলবৎ হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত বছরের শেষেও মণিপুরে ছ’মাসের জন্য বর্ধিত হয়েছিল আফস্পা-র মেয়াদ। ইম্ফল, বিষ্ণুপুর, জিরিবাম-সহ ১৯টি থানা এলাকা বাদ দিয়ে বাকি রাজ্যে এই আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এ বার ১৩টি থানা বাদ দিয়ে গোটা রাজ্যে বলবৎ হল সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন। পরবর্তী ছ’মাসের জন্য সমগ্র মণিপুর রাজ্যকেই ‘অশান্ত অঞ্চল’ বলে অভিহিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আগামী ১ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে নতুন নির্দেশ কার্যকর করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজ্যে নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতেই এই পদক্ষেপ।

মণিপুরের পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশের তিরাপ, চাংলাং এবং লংডিং জেলা এবং তিনটি থানা এলাকাতেও ছ’মাসের জন্য বর্ধিত হয়েছে আফস্পার মেয়াদ। এ ছাড়াও, নাগাল্যান্ডের আটটি জেলা এবং আরও পাঁচ জেলার ২১টি থানা এলাকাকেও আফস্পার আওতায় আনা হয়েছে।

উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি রয়েছে। স্থগিত রাখা হয়েছে বিধানসভাও। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পদত্যাগের পর থেকেই সে রাজ্যে ব্যাপক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে ২৫০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ। সেই আবহেই অশান্তি-কবলিত এই রাজ্যে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। মণিপুরের দায়িত্ব এখন সামলাচ্ছেন রাজ্যপাল অজয়কুমার ভল্লা।

উল্লেখ্য, ’৮০র দশকের গোড়ার দিক থেকে থেকেই আফস্পা-র আওতায় ছিল মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেগুলিকে ‘অশান্ত অঞ্চল’ বলে অভিহিত করা হয়ে এসেছে। এই আইনটি ‘অশান্ত এলাকায়’ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী করে। বিরোধীরা সশস্ত্র বাহিনীর হাতে এ ধরনের ক্ষমতা প্রদানের সিদ্ধান্তের বার বার সমালোচনা করলেও চিঁড়ে ভেজেনি। তবে ২০০৪ সালে থাংজাম মনোরমার ধর্ষণ ও হত্যার পর ব্যাপক প্রতিবাদের জেরে সাময়িক ভাবে ইম্ফলের কয়েকটি জায়গায় আফস্পা আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.