লাস ভেগাসের মতো অত জাঁক নেই। বাতাসে ডলারও ওড়ে না। কিন্তু আবেগ আছে ষোলো আনা! সেই আবেগের বশেই গোটা গ্রাম মেতে ওঠে জুয়াখেলায়। বছরের একটি দিনেই ভেগাসের মতো ‘ক্যাসিনো শহর’ হয়ে ওঠে সেই গ্রাম!
গ্রামের নাম মোকাতিপুর। পুরাতন মালদহের গ্রাম। প্রতি বছর মূলাষষ্ঠীর তিথিতে এই গ্রামে জুয়ার মেলা বসে। জুয়াখেলা সেখানে অপরাধ নয়। বরং তাকে ধরা হয় স্থানীয় প্রাচীন লোকাচার বলে। সেখানে শুধু গ্রামের লোকেরাই নন, রাজ্যের অন্যান্য জেলা, এমনকি বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং অসম থেকেও অনেকে আসেন জুয়া খেলতে। জুয়া খেলুড়েদের পাহারাও দেয় স্থানীয় পুলিশ।
কথিত, ‘মনসামঙ্গল কাব্য’ অনুযায়ী পুরাতন মালদহের এই অঞ্চলের নদী দিয়ে স্বামী লখিন্দরের দেহ ভেলায় নিয়ে ভেসে গিয়েছিলেন বেহুলা। সেই সময় এক জুয়াড়ি জুয়া খেলে সর্বস্ব হারিয়ে মোকাতিপুরে নদীর ধারে বসে কাঁদছিলেন। কথা বলে বেহুলা জানতে পারেন, জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবছেন ওই জুয়াড়ি। বেহুলা তাঁকে হতাশ হতে নিষেধ করেন এবং হাতের সোনার চুড়ি খুলে দিয়ে দেন। জানান, ওই চুড়ি দিয়ে জুয়া খেললে জুয়াড়ি তাঁর হারানো সব কিছু আবার ফিরে পাবেন। পরে বেহুলার কথা সত্যি বলে প্রমাণিত হয়। বলা হয়, সেই মঙ্গলকাব্যের যুগ থেকেই চলে আসছে জুয়ার মেলা।
এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মূলাষষ্ঠীর তিথিতে, শনিবার সকাল থেকে জুয়ার মেলা বসেছিল মোকাতিপুরে। চলেছে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ষষ্ঠীর পুজো দিয়ে জুয়া খেলায় মেতেছেন পুরুষ-মহিলারা। স্থানীয় মহিলারা মনেই করেন, এই মেলাতে জুয়া খেললে সারা বছর সংসারে সুখ থাকে। লক্ষ্মীলাভ হয়। নিঃসন্তান গৃহবধূর সন্তান লাভ হয়। মেলায় আসা বধূ হেমলতা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই মেলায় এসে মূলাষষ্ঠীর পুজো দিয়ে সামান্য পয়সার জুয়া খেলেছি। লাভও হয়েছে।’’ দীপিকা কর্মকার বলেন, ‘‘বছরের এই দিনে আমাদের জুয়া খেলায় কোনও বাধা থাকে না। তাই এই দিনটির দিকে আমরা সারা বছর তাকিয়ে থাকি।’’
মেলায় গিয়েছিলেন পুরাতন মালদহ পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপ্না হালদার। তিনি বলেন, ‘‘১৬ বছর হল বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর থেকেই এই মেলায় আসি। এই মেলার ঐতিহ্য হচ্ছে, মহিলারাও জুয়া খেলে। আজকের দিনে কারও জন্য বাধা নেই। তাই সকলে মিলে আমরা প্রচুর আনন্দ উপভোগ করে থাকি।’’