স্থানীয় ‘স্লিপার সেলের’ সাহায্যেই পহেলগাঁওয়ে হামলা! বলছেন আত্মসমর্পণ করা কাশ্মীরি জঙ্গি

স্থানীয় স্লিপার সেলের সদস্যদের সাহায্য ছাড়া পহেলগাঁও হামলা সম্ভব হত না। হামলাকারী লশকর জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল কাশ্মীরের ওই সেলের অন্তত পাঁচ থেকে ছয় জন সদস্যের। এমনটাই দাবি করলেন কাশ্মীরের ওই স্লিপার সেলের এক প্রাক্তন সদস্য। অতীতে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে গিয়েছিলেন ওই জঙ্গি। তার পরেই স্লিপার সেল ছেড়ে দেন। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, বৈসরন উপত্যকায় হামলার অন্তত এক মাসে আগে স্লিপার সেলের সদস্যদের পরামর্শ নেওয়া হয়। আগেভাগে পরিকল্পনাও সেরে রাখা হয়।

স্লিপার সেলের ওই প্রাক্তন সদস্য বলেন, ‘‘শ্রীনগরে যদি আমায় হামলা করতে হত, তা হলে অন্ধ ভাবে তো সেটা করতে পারতাম না। একই ভাবে স্লিপার সেলের সদস্যদের সাহায্য ছাড়া পহেলগাঁওয়ে হামলা সম্ভব হত না। আমি বাইরে থেকে এসে জানব কী ভাবে, যে কত জন জওয়ান এখানে নিযুক্ত রয়েছেন। হামলার আগে আমাকে এলাকা রেকি করতে হবে। এই স্লিপার সেলই তা করে তথ্য জোগান দেয়।’’

এই স্লিপার সেলের কাজ কী, তা-ও জানিয়েছেন ওই প্রাক্তন সদস্য। মূলত কাশ্মীরের স্থানীয়দের নিয়ে তৈরি হয় এই সেল। ওই যুবক জানান, সেনার গতিবিধি নিয়ে জঙ্গিদের তথ্য দেয় এই স্লিপার সেল। জঙ্গিদের খাবার, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও জোগান দেন এই সেলের সদস্যেরা। অতীতে দুই থেকে চার বছর এই সেলেরই সদস্য ছিলেন কাশ্মীরের বাসিন্দা যুবক। গ্রেনেড হামলা করতে গিয়ে সেনার হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। তার পরে আড়াই বছর জেলে ছিলেন।

পহেলগাঁও হামলার তদন্ত করছে এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা)। তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, জঙ্গিদের সাহায্য করেছিল লশকর-এ-ত্যায়বার কমান্ডার ফারুক আহমেদের নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ ফারককে খবর জোগান দেয় যে স্লিপার সেল, তার সদস্যেরাই সাহায্য করেছিল হামলাকারীদের। ওই যুবক বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, স্লিপার সেলের পাঁচ থেকে ছয় জন সদস্য এখানে জঙ্গিদের সঙ্গে কাজ করেছে। ঘটনাস্থলের তথ্য তাঁরাই দিয়েছিলেন জঙ্গিদের। এক মাস আগে এ সব নিয়ে পরামর্শ করেন তাঁরা, তার পরে আগাম পরিকল্পনা সাজানো হয়।’’

ওই যুবক জানিয়েছেন, অতীতে এ ধরনের বহু হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মাধ্যমে অনেক হামলার ঘটনা হয়েছে।’’ তিনি জানান, হামলা চালাতে গিয়ে ধরাও পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু নাবালক থাকায় পরে ছাড়াও পান। ২০১৫ সালে ফেসবুকের মেসেজ পাঠিয়ে স্লিপার সেলে নিয়োগ করা হয়েছিল তাঁকে। প্রথমে গভীর জঙ্গলে এক জঙ্গিকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছিল। ওই জঙ্গি তাঁকে এক জায়গা থেকে জিনিস নিয়ে অন্য জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেন। বেশ কয়েক বার সেই কাজ করেছিলেন বলে দাবি যুবকের। পরে ওই জঙ্গি নিহত হন। তখন নির্দেশ দিতে থাকেন অন্যেরা। যুবকের দাবি, তাঁর দুই বন্ধু সক্রিয় জঙ্গি ছিলেন। ১৩-১৪ জন বন্ধু এনকাউন্টারে নিহত হয়েছিলেন। তবে সেই জঙ্গিদের জন্য কাজ করার জন্য এখনও অনুতপ্ত তিনি। যুবকের কথায়, ‘‘১১০ শতাংশ ভুল করেছিলাম।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.