‘বন্দুক বাইরে রেখে যান’! হাই কোর্টে ঢুকতেই শুনতে হল শুভেন্দুকে, কী জবাব দিলেন বিরোধী দলনেতা

কাজেকর্মে বাধা দিচ্ছে পুলিশ! এই অভিযোগ তুলে শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে বি-গেট দিয়ে ঢোকার মুখে তাঁকে শুনতে হল, ‘‘বন্দুক নিয়ে ভিতরে যাওয়া যাবে না!’’ উচ্চ আদালতের নিরাপত্তারক্ষীর মুখে এই কথা শুনে বেজায় চটে গেলেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের কোনও মন্ত্রী এলে এটা বলতে পারবেন!’’ এর পর অবশ্য আর সেখানে দাঁড়াননি শুভেন্দু। ওই পুলিশকর্মীকে ‘তাঁবেদারি’ কম করার পরামর্শ দিয়ে সোজা ভিতরে ঢুকে যান তিনি।

সাধারণত অনুমতি ছাড়া আদালতের ভিতরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করা যায় না। দস্তুর হল, পুলিশ বা সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র থাকলে তাঁরা তা বাইরে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় রেখে কোর্টের ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন। শুক্রবার হাই কোর্টে মামলা দায়ের করতে যান বিরোধী দলনেতা। নিরাপত্তারক্ষীদের বাইরে রেখে বি-গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে যান তিনি। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবীরা। এমন সময় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশকর্মী শুভেন্দুর উদ্দেশে বলেন, ‘‘বন্দুক বাইরে রেখে যাবেন। ভিতরে নিয়ে যাওয়া যাবে না।’’ পুলিশকর্মীর মুখে এ কথা শুনেই দাঁড়িয়ে পড়েন শুভেন্দু। পুলিশকর্মীকে জিজ্ঞাসা করেন, রাজ্যের কোনও মন্ত্রী এলে তিনি এ কথা বলতে পারবেন তো? বিরোধী দলনেতার এই প্রশ্নে হেসে ফেলেন পুলিশকর্মী। শুভেন্দু বলতে থাকেন, ‘’৪৬ শতাংশ ডিএ পান। তাঁবেদারি বন্ধ করুন।’’

দৈনন্দিন নানা কাজকর্মে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। এই অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলনেতা। শুক্রবার মামলা দায়ের করতে এসে শুভেন্দু জানান, নেতাই-সহ কয়েকটি জায়গায় ঘটা কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল। তার পরেও পুলিশ বাধা দেয়। বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যাতে তিনি যেতে না পারেন, সেই চেষ্টা করা হয়। বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, কলকাতার মোড়ে মোড়ে সিগন্যালে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয় তাঁকে। ২৯ হাজার টাকার ট্র্যাফিক জরিমানাও দিয়েছেন তিনি। এ সব কারণেই তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নাম বদল হয়ে মমতা পুলিশ হয়েছে। আড়াই বছর ধরে স্বাভাবিক কাজকর্মেই বাধা দিয়ে আসছে এই সরকার। আমার সংসদীয় কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। আমাকে কর্মসূচি করতে দেওয়া হয় না। মমতা রাজ্যের পুলিশকে অধঃপতনে নামিয়েছে।’’

শুক্রবারই বাকুঁড়ার কোতুলপুরে পদযাত্রা করার কথা ছিল শুভেন্দুর। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমতি না মেলায় সেই কর্মসূচি বাতিল হয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর কোতুলপুরের বিজেপি বিধায়ক হরকালী প্রতিহার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন। কোতুলপুরের বিধায়কের এই শিবির বদলের পরেই কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে গত ১ নভেম্বর কোতুলপুরের মোহিনীমোহন ময়দানে বিজয়া সম্মিলনীর ডাক দেয় বিজেপি। ওই সম্মেলনের জন্য পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় পরে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় তারা। বিজেপির আশা ছিল, শেষ মুহুর্তে হলেও আদালতের তরফে অনুমতি মিলবে। কিন্তু বাঁকুড়া পুলিশের কাছ থেকে ময়দানে প্রবেশ ও বাইরের একমাত্র পথের যুক্তি শুনে শেষ মুহুর্তে অনুমতির আবেদন বাতিল করে আদালত। এ দিকে সম্মেলন শুরু হওয়ার পর আদালত অনুমতির আবেদন বাতিল করায় মাঝপথে রণে ভঙ্গ দিতে হয় বিজেপিকে। শুভেন্দু ওই দিন কোতুলপুরে পৌঁছে গেলেও আদালত অনুমতি না দেওয়ায় আর সভামুখো হননি। দলীয় কর্মীদের নিয়ে স্থানীয় একটি লজ থেকে তিনি বাজার পরিক্রমা করে নেতাজি মোড় পর্যন্ত যান। কোতুলপুর ছাড়ার আগে সেই দিনই শুভেন্দু ঘোষণা করেন, আগামী ১৭ নভেম্বর তিনি কোতুলপুরে পদযাত্রা করবেন। সেটিও বাতিল হওয়ায় বিজেপি সূত্রে খবর মিলেছিল, হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন বিরোধী দলনেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.