আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার বিচার শুরু হল আলিপুর আদালতে। এই মামলায় অভিযুক্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সিবিআই কোর্টে চার্জ গঠন হয়েছে। মঙ্গলবার বিচার শুরুর দিনেই সিবিআইকে ধমক দিলেন বিচারক। আদালতে মূল অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ওই সংস্থা। তা-ই নিয়ে তদন্তকারী অফিসার (আইও)-কে ধমক দেন বিচারক। তাঁর পর্যবেক্ষণ, এই শেষ সুযোগ দেওয়া হল আইও-কে। এর পরে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার কথাও জানিয়েছেন বিচারক।
মঙ্গলবার সন্দীপদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় বিচার শুরুর দিনে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যান প্রথম সাক্ষী। সেই সময় সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, তাদের কাছে মূল অভিযোগপত্র নেই। তা অন্য কোর্টে রয়েছে বলেও জানানো হয়। টালা থানা যে এফআইআর করেছিল, তা-ও আদালতে জমা দিতে পারেনি সিবিআই। বিচারকের পর্যবেক্ষণ, বিচার যাতে সুষ্ঠু ভাবে এগোয়, সে জন্য আইও-কে সংবেদনশীল হয়ে আদালতকে সাহায্য করা উচিত। কিন্তু এই মামলায় প্রসিকিউটর বা আইও, কেউই তাদের কর্তব্য পালন করেননি। কোর্টের কাছে এটা কর্তব্যে গাফিলতির শামিল। আইও আদালতে সময়ে নথি জমা করবেন বলেও প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু তিনি কোর্টে হাজির থেকে ‘অজুহাত’ দিচ্ছেন। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত ব্যস্ততা নিয়ে যে ‘অজুহাত’ আইও দিয়েছেন, তা বিবেচনাযোগ্য। কিন্তু মূল অভিযোগপত্র এবং এফআইআর সার্ভে বিল্ডিংয়ের বিশেষ আদালতে রয়েছে বলে তিনি যে ‘অজুহাত’ দিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আদালতের আরও পর্যবেক্ষণ, অনুসন্ধান এবং নথি রাখা আইওর কর্তব্য। অন্য কোর্টে সেই নথি থাকলেও তা সংগ্রহ করা কর্তব্য তাঁর। এর পরেই আদালত জানিয়েছে, এ ধরনের আচরণ ঠিক করার জন্য আইওকে শেষ সুযোগ দেওয়া হল। তা না করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি করে দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই। তাদের চার্জশিটে মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ছাড়াও নাম রয়েছে আফসর আলি, বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা এবং আশিস পাণ্ডের। তাঁরা সকলেই এখন জেলবন্দি।
আরজি কর হাসপাতালে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক দুর্নীতি চলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপারের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনার নামে ‘টেন্ডার দুর্নীতি’ হয়েছিল আরজি করে। হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ‘ঘনিষ্ঠ’দের টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছিলেন।
আরজি করে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গত বছরের ২৯ নভেম্বর আলিপুর আদালতে চার্জশিট জমা করে সিবিআই। চার্জশিটে নাম রয়েছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ-সহ পাঁচ জনের।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে এক চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়। ওই ঘটনায় গ্রেফতার হন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। সেই আবহেই প্রকাশ্যে আসে আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ।