অশান্তি রুখতে কার্ফু চলছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে। সোমবার সেই কার্ফু ষষ্ঠ দিনে পা রেখেছে। গোটা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি। এই ক’দিনে কোথাও তেমন অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষে যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে দু’জনের শেষকৃত্য সোমবারই সম্পন্ন হওয়ার কথা। তার আগে লাদাখের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন লেফ্টেন্যান্ট গভর্নর (এলজি) কবীন্দ্র গুপ্ত।
লাদাখের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সোমবার রাজভবনে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন এলজি। পিটিআই-এর প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, লেহ শহরে এখনও স্থগিত রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। তা ছাড়া, কার্গিল-সহ একাধিক জায়গায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির সমাবেশ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক প্রশাসনিক কর্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, কার্ফু চলাকালীন গোটা এলাকায় পরিস্থিতি মোটামুটি শান্তিপূর্ণই ছিল। কোথাও নতুন করে কোনও অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। তবে সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে এখনও মোতায়েন রয়েছে পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সর্বক্ষণ নজরদারি চলছে। কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই রবিবার দুই তরুণ স্ট্যানজিন নামগিয়াল (২৪) ও জিগমেট দোরজে (২৫)-র শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার নিহত প্রাক্তন সেনাকর্মী সেওয়াং থারচিন এবং রিনচেন দাদুল (২১)-এরও শেষকৃত্য হবে। তার আগে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন এলজি।
অন্য দিকে, লাদাখের পরিস্থিতির জন্য আরও একবার কেন্দ্রকে দুষেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। ওমরের অভিযোগ, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে স্বতন্ত্র রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্র। দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। রবিবার এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে ওমর বলেন, ‘‘যখন আপনারা চেয়েছিলেন লাদাখ পার্বত্য কাউন্সিলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, তখন আপনি তাদের সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতাভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ সবাই জানত যে লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলে সংযোজন প্রায় অসম্ভব। যে অঞ্চলের এক দিকে চিন এবং অন্য দিকে পাকিস্তানের সীমান্ত রয়েছে, সেখানে কড়া নিরাপত্তা প্রয়োজন। ফলে সেখানে ষষ্ঠ তফসিল অসম্ভব। অথচ, আপনারা সব জেনেও এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন!’’ পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুকের প্রতি কেন্দ্রের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তনের সমালোচনাও শোনা গিয়েছে ওমরের মুখে। তিনি বলেন, ‘‘উনি কয়েক দিন আগে পর্যন্তও পরিবেশ যোদ্ধা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করছিলেন, ২০১৯ সালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দিয়ে লাদাখবাসীর স্বপ্নপূরণের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন! তখন কেউ তাঁর দোষ খুঁজে পাননি। আজ হঠাৎ পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া গেল! দু’দিন আগেও তো এমন কোনও অভিযোগ ছিল না। তা হলে এখন এ সব কোথা থেকে এল?’’
লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা এবং পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে গত বুধবার লাদাখের রাজধানী লেহ শহরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন জনতা। অভিযোগ, সে সময় লেহ-তে বিজেপির পার্টি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পার্টি অফিসের সামনে থাকা একটি পুলিশের গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সংঘর্ষে মৃত্যু হয় চার জনের। প্রায় ৮০ জন পুলিশকর্মী-সহ ১৫০ জনেরও বেশি আহত হন। তার পর থেকেই কার্ফু জারি হয় এলাকা জুড়ে। দুই কাউন্সিলর-সহ ৬০ জনেরও বেশি লোককে আটক করা হয়। শুক্রবার জাতীয় নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয় সোনম ওয়াংচুককে। আপাতত রাজস্থানের যোধপুর কারাগারে রাখা হয়েছে তাঁকে।