ইরানের উপর ইজ়রায়েলের হামলার পর ৯ দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও ইরান থেকে বার হতে পারেননি কলকাতার উইমেন্স ক্রিশ্চিয়ান কলেজের অধ্যাপক ফাল্গুনী দে। পাহাড চড়তে ইরানে গিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে সেখানেই আটকে রয়েছেন। ভারতে ফেরার সব রকম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। আপাতত তিনি অপেক্ষায় বিমানের টিকিটের। ইরান থেকে ভারতে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন ফাল্গুনী।
আপাতত ইরানের মাসাদে আটকে রয়েছেন ফাল্গুনী। সেখান থেকে টেলিফোনে আনন্দবাজার ডট কম-কে তিনি বললেন, “এখন মাসাদে আছি। পূর্ব ইরানের একটা শহর। আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান সীমান্তের কাছে। ইরান ভারতের জন্য আকাশপথ খুলে দিয়েছে। একে একে বিমানে ভারতীয়দের বার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার নামও নথিভুক্ত রয়েছে। বিমানের টিকিটের অপেক্ষায় আছি। আশা করি এ বার দেশে ফিরতে পারব।”
তবে ফাল্গুনীর মতোই ইরানে বেশ কয়েক হাজার ভারতীয় আটকে রয়েছেন। তার মধ্যে পড়ুয়াও রয়েছেন। সকলকে ধীরে ধীরে বার করে আনা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে। ফলে কবে ফাল্গুনী দেশে ফেরার বিমানে উঠতে পারবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে কয়েক দিন তেহরানের এক হোটেলেই ছিলেন ফাল্গুনী। তার পরে সেখান থেকে নিজের উদ্যোগেই সড়কপথে ইরান-আজ়ারবাইজান (আস্ত্রা) সীমান্তে পৌঁছোন। তার আগে ই-ভিসার আবেদন করে তা পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আস্ত্রা সীমান্তে গিয়ে জানতে পারেন যে সড়কপথে আজ়ারবাইজান পৌঁছোতে গেলে ই-ভিসাতে হবে না। তার জন্য আজ়ারবাইজানের ইমিগ্রেশন দফতরের কাছ থেকে একটা মাইগ্রেশন কোড প্রয়োজন। তার জন্য ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। কোডের আবেদনও করেছিলেন ফাল্গুনী।
মাইগ্রেশন কোড পেতে দেরি হওয়ায় ফাল্গুনী ভেবেছিলেন, আর্মেনিয়া হয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করবেন। তিনি বললেন, “শুক্রবার ৩টে নাগাদ আস্ত্রা থেকে বার হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আর্মেনিয়া সীমান্তে যাব। কিন্তু সেখানে যেতে পারিনি। ২০ ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে শনিবার মাঝরাতে মাসাদ পৌঁছোয়। রাস্তায় ইরানের পুলিশ গাড়ি আটকায়। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওরা। পরে ছাড়া পেয়ে কোনও মতে এখানে পৌঁছেছি। এখন বিমানের অপেক্ষা করছি।”
মাসাদে থাকা-খাওয়ার কোনও সমস্যা হচ্ছে না ফাল্গুনীর। প্রশাসন থেকেই সব ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ফাল্গুনী বললেন, “আমাদের বিনামূল্যে হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সব রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি। প্রশাসন চেষ্টা করছে, যত দ্রুত আমাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়।” তেহরানের হোটেলে ভারতীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হলেও মাসাদের হোটেলে প্রচুর ভারতীয়। ফাল্গুনী বললেন, “এখানে ছয় থেকে সাতটা হোটেলে শুধুই ভারতীয়দের রাখা হয়েছে। অনেকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এখনও শ’য়ে শ’য়ে ভারতীয় বাসে করে আসছে।”
কখনও আজ়ারবাইজান, কখনও আর্মেনিয়া হয়ে দেশে ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন ফাল্গুনী। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও দেশে ফেরার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। আপাতত তিনি বসে রয়েছেন মাসাদে। কবে ইরান ছাড়তে পারেন, সেই কথাই ভাবছেন কলকাতার অধ্যাপক।