কলকাতা লিগে গড়াপেটা! দুই ক্লাবের তিন ফুটবলার, এক কোচ অভিযুক্ত, তদন্তে পুলিশ

কলকাতা লিগে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ। প্রিমিয়ার ডিভিশনের দুই ক্লাব খিদিরপুর এবং মেসারার্স ক্লাবের তিন ফুটবলার এবং এক সহকারী কোচের বিরুদ্ধে গড়াপেটায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের সাময়িক ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (আইএফএ)। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশকে। অভিযুক্ত দুই ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছেও জবাব তলব করা হয়েছে।

খিদিরপুরের ফুটবলার অভীক গুহের বিরুদ্ধে গড়াপেটার অভিযোগ উঠেছে। মেসারার্সের দুই ফুটবলার মুসলিম মোল্লা এবং সান্নিক মুর্মুর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া মেসারার্সের সহকারী কোচ রাজীব দে-র বিরুদ্ধে গড়াপেটার অভিযোগে নির্বাসিত অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক জনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ রয়েছে। অমিতাভের বিরুদ্ধে গত বছর লিগে গড়াপেটার অভিযোগ ওঠে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে নির্বাসিত করেছে আইএফএ। তাঁর সঙ্গে দলের অনুশীলনে কথা বলতে দেখা গিয়েছে রাজীবকে। সেই ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে।

আইএফএ যে গড়াপেটা বিরোধী এজেন্সির সঙ্গে কাজ করে, তারাই রিপোর্ট দিয়েছে তিন ফুটবলারের বিরুদ্ধে। মাঠে ফুটবলারদের আচরণ ঘিরে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, অভিযুক্ত তিন ফুটবলারের বিরুদ্ধেই গত মরসুমে দিল্লি লিগে গড়াপেটার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ওঠার পরই সাময়িক ভাবে চার জনকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ তদন্তের রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত এই শাস্তি বহাল থাকবে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে বলে আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত।

আইএফএ সচিব বলেছেন, ‘‘আমাদের এজেন্সির রিপোর্ট পাওয়ার পরই প্রাথমিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বুধবার দুই ক্লাবের প্রতিনিধিদের আমরা ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তাঁদের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশ তদন্ত করছে। কারও দোষ প্রমাণ হবে আজীবনের জন্যও নিষিদ্ধ করা হতে পারে। শাস্তি নির্ভর করবে অপরাধ কতটা গুরুতর, তার ভিত্তিতে।’’ অনির্বাণ আরও বলেছেন, ‘‘আমরা মেসারার্সের সহকারী কোচের কাছেও জানতে চেয়েছিলাম, কেন তিনি গড়াপেটার দায়ে নিষিদ্ধ ব্যক্তিকে ক্লাবের অনুশীলনে ঢুকতে দিচ্ছেন? রাজীব আমাদের উত্তর দিয়েছেন। তিনি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ অমিতাভ তাঁর পরিচিত। অমিতাভ দেখা করতে এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে। সে সময় তিনি কথা বলেন। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।’’

অভিযোগ নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমকে খিদিরপুর ক্লাবের ফুটবল সচিব অমিতাভ বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘আইএফএর সন্দেহ হয়েছে। ওরা তদন্ত করছে। তদন্তের ফলাফল দেখে কথা বলব। কারও সন্দেহের বশে মন্তব্য করব না। আমাদের কেউ কিছু জানায়নি। আইএফএর তদন্ত করার এবং কেউ অপরাধ করলে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু বলা এখন সম্ভব নয়।’’

অন্য দিকে, মেসারার্স ক্লাবের সচিব ভাষ্কর ভাদুড়ির বক্তব্য, ‘‘আমাদের ১২৩ বছরের ক্লাব। অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। এটা ঠিক, অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় আমাদের অনুশীলনে এসেছিলেন। এ ব্যাপারে আমরা সহকারী কোচকে শো-কজ করেছিলাম। তাঁর উত্তর আমরা আইএফএকে পাঠিয়ে দিয়েছি। ফুটবলারদের ব্যাপারেও তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবে। তবে আইএফএ এনওসি দিয়েছিল বলেই আমরা অভিযুক্ত দুই ফুটবলারকে সই করিয়েছিলাম। গত বছরও কলকাতা মাঠে ওরা খেলেছিল। ক্লাবের গভর্নিং বডির মিটিং ডাকা হচ্ছে। সেখানে আলোচনা হবে। এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’’

খিদিরপুর এবং মেসারার্স ক্লাবকেও শো-কজ করেছে আইএফএ। তাদের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সচিব। দুই ক্লাবের উত্তর সন্তোষজনক না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে আইএফএ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.