পাঁচ বছর পরে আবার কৈলাস ও মানস সরোবর যাত্রা চালু হচ্ছে। শুক্রবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এই ঘোষণা করে বলেছেন, ‘‘দ্রুত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’’ সাধারণ নাগরিকেরা এ বছর থেকে কৈলাস ও মানস সরোবর যাত্রার সুযোগ পাবেন বলে জানান তিনি।
সাধারণ ভাবে প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চিন অধিকৃত তিব্বতের মানস সরোবর এবং কৈলাসে যাত্রা করতেন ভারতীয় পর্যটক ও পুণ্যার্থীরা। কিন্তু ২০২০ সালে কোভিড অতিমারির কারণে যাত্রা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে, সে বছরেরই ১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা ফৌজের আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে তিব্বতের দুই তীর্থক্ষেত্রের ‘দরজা’ ভারতীয়দের জন্য বন্ধ ছিল।
গত ডিসেম্বরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) ‘টহলদারির সীমানা’ নির্ধারণ এবং মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছোনোর (ডিসএনগেজমেন্ট) বিষয়ে সমঝোতায় এসেছিল নয়াদিল্লি এবং বেজিং। তার পরেই নতুন করে কৈলাস-মানসযাত্রা শুরুর বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আলোচ্য হয়ে ওঠে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির ৭৫তম বর্ষে বেজিংয়ে ভারতীয় বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইর বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়।
আগে মূলত সিকিমের নাথু লা এবং উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাসের মাধ্যমে ভারত থেকে তিব্বতে প্রবেশ করতেন ভারতীয় পর্যটক ও পুণ্যার্থীরা। তার পর কড়া নিরাপত্তা বলয়ে তাঁদের কৈলাস-মানস পর্যন্ত নিয়ে যেত চিনা প্রশাসন। উত্তরাখণ্ডের পথে কৈলাস-মানসযাত্রার তিনটি ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগে যেতে হয় পিথোরাগড় থেকে তাওয়াঘাট, যার দূরত্ব ১০৭.৬ কিলোমিটার। দ্বিতীয় পর্যায়ে যাত্রা শুরু হয় তাওয়াঘাট থেকে। ১৯.৫ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে পৌঁছোতে হয় ঘটিয়াবগড়।
কৈলাস ও মানস সরোবর যাত্রার শেষ ধাপে রয়েছে ঘটিয়াবগড় থেকে চিন সীমান্ত লাগোয়া লিপুলেখ পাস পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রাস্তা। ২০২০ সালে দ্বিতীয় ধাপের রাস্তাকে সম্প্রসারণ ও সংস্কার করে যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত করেছে বর্ডার রোড অর্গানাইজ়েশন। এর ফলে তাওয়াঘাট থেকে সরাসরি লিপুলেখ পর্যন্ত গাড়িতে পৌঁছে যাওয়া যাবে। কালাপানির কাছে লিপুলেখ পাস ভারতের পশ্চিম সীমান্তের শেষ প্রান্ত বলে ধরা হয়। কিন্তু এই কালাপানি এলাকায় সীমান্ত চিহ্নিতকরণ নিয়ে ভারত ও নেপালের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।