চাকরি ছেড়ে ‘ম্যাডাম এন’-এর সঙ্গী! পাক মগজধোলাই-মাস্টার নাসিমের কথায় মজেই তথ্য পাচারের চক্রে জড়ান জ্যোতিরা

পাক গুপ্তচর সংস্থা-যোগের তদন্তে এ বার উঠে এল পাকিস্তানের এক প্রাক্তন পুলিশকর্মীর নাম! নাসির নামে ওই ব্যক্তি পাকিস্তানে পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর হিসাবে কর্মরত ছিলেন। কয়েক বছর আগে পুলিশের কাজ থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। নাসিরকে ব্যবহার করেই ভারতীয় নেটপ্রভাবীদের ‘মগজধোলাই’ করার চেষ্টা হত বলে অভিযোগ।

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে বেশ কয়েকজন ভারতীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন দুই নেটপ্রভাবীও— হরিয়ানার জ্যোতি মলহোত্রা এবং পঞ্জাবের জসবীর সিংহ। জসবীরের পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শনিবারই দু’দিন বৃদ্ধি করেছে আদালত। এ দিকে গুপ্তচরযোগের তদন্তে উঠে এসেছে, পাকিস্তানে বসেই একটি চক্র ভারতীয় নেটপ্রভাবীদের মগজধোলাইয়ের চেষ্টা করত। ইতিমধ্যে নোশাবা শেহজ়াদ ওরফে ‘ম্যাডাম এন’ নামে এক পাকিস্তানি মহিলার ভূমিকা তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে। পাকিস্তানের লাহোরে একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার তিনি।

ভ্রমণ সংস্থা চালানোর পাশাপাশি তিনি পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার হয়েও কাজ করতেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। নাসিরও এই ‘ম্যাডাম এন’-এর সঙ্গেই ভারতীয় নেটপ্রভাবীদের মগজধোলাই করার চেষ্টা করতেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ‘ম্যাডাম এন’ এবং নাসির দু’জনে মিলে ভারতীয় নেটপ্রভাবী এবং পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করতেন বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের।

এক তদন্তকারী আধিকারিক সংবাদমাধ্যম ‘টাইম্‌স অফ ইন্ডিয়া’-কে জানান, পাকিস্তানে যাওয়া ভারতীয় নেটপ্রভাবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন নাসির। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার হয়ে কাজ করলেও সন্দেহ এড়াতে নিজেও নেটপ্রভাবী হয়ে উঠেছিলেন নাসির। পাকিস্তানে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার জন্য যাতে ভারতীয়দের ভিসা দেওয়া হয়, তা নিয়ে বিভিন্ন ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করতেন তিনি। তদন্তকারীদের সন্দেহ, গুপ্তচরবৃত্তির আসল উদ্দেশ্যকে আড়াল করতেই এই সব করতেন তিনি।

তদন্তকারীদের সন্দেহ, পাকিস্তানে যাওয়া বাছাই করা কিছু নেটপ্রভাবীকে বিভিন্ন সুযোগসুবিধা দিতেন নাসিরেরা। তাঁদের পাকিস্তান ঘোরানো, পাঁচতারা হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন পাকিস্তানের এই সন্দেহভাজনেরা। পরিবর্তে পাকিস্তানের গুনগান করে সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিয়ো পোস্ট করানো হত ওই ভারতীয় নেটপ্রভাবীদের দিয়ে।

পাক গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে ধৃতদের জেরা করে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্র ধরেই ‘ম্যাডাম এন’ এবং নাসিরের নাম উঠে আসে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, ‘ম্যাডাম এন’ অন্তত ৫০০ জন গুপ্তচরের একটি ‘স্লিপার সেল’ তৈরির চেষ্টা করছিলেন, যাতে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গোপন খবর পাকিস্তানে পাঠাতে পারেন। এ জন্য প্রথমেই ভারতের নেটপ্রভাবীদের পাকিস্তানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন নোশাবা। তার পর ধীরে ধীরে তাঁদের পাক সেনা এবং আইএসআইয়ের আধিকারিকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এ ভাবে গত ছ’মাসে নোশাবা প্রায় ৩,০০০ ভারতীয় নাগরিক এবং ১,৫০০ অনাবাসী ভারতীয় (এনআরআই)-কে পাকিস্তান ভ্রমণে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.