বিচারপতির যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে নগদ উদ্ধারের ঘটনায় এবার কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটছে কেন্দ্র। সূত্রের খবর, নগদ কাণ্ডে অভিযুক্ত বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে সরাতে আসন্ন বাদল অধিবেশনে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পেশ করতে চলেছে শাসক দল। জানা যাচ্ছে, সংসদে বিচারপতির বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব আনতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গেও কথা বলবেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে এগোতে চায় কেন্দ্র! বুধবার এমনটাই জানিয়েছেন সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। আগামী ২১ জুলাই থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হবে। ওই অধিবেশনে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার পথে এগোতে পারে কেন্দ্র। ওই বিষয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্র আলোচনা শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ড ও বিপুল পরিমাণ পোড়া টাকা উদ্ধারের ঘটনা:
২০২৫ এর ১৪ মার্চ তৎকালীন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি ভার্মার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ও বিপুল পরিমাণ পোড়া টাকা উদ্ধারের ঘটনায় সাড়া পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। অভিযোগ ওঠে পুড়ে যাওয়া ওই নোটের বান্ডিল ছিল হিসাব বহির্ভূত টাকা। মামলার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ঋণ সদস্যের আভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। এই কমিটি বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেলেও সেভাবে এখনো কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। শুধুমাত্র দিল্লি হাইকোর্ট থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় এলাহাবাদ হাইকোর্টে।
হোলির ছুটিতে দিল্লিতে তার সরকারি বাংলোয় আগুন নেভানোর সময় দমকল কর্মীরা এই বিপুল পরিমাণ হিসাব বহির্ভূত নগদ অর্থ উদ্ধার করেছেন। বাসভবনে আগুন লাগার সময় বিচারকের পরিবারের কেউ দিল্লিতে ছিলেন না। বিচারপতি ভার্মা তখন নগদ অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। খবর পেয়েই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না দ্রুত কলেজিয়ামের বৈঠক ডাকেন। প্রধান বিচারপতি ভার্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে এই নগদ অর্থ উদ্ধারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে, পাঁচ সদস্যের কলেজিয়াম বিচারপতি ভার্মার বদলির বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে একমত পোষণ করেছেন। তবে, নানা মহলে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে।
ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব:
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, বিষয়টির সঙ্গে বিচার বিভাগে দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ জড়িত। ফলে এটি নিয়ে প্রতিটি দলের পৃথক রাজনৈতিক অবস্থানের কোনও বিষয় নেই। তাই এটি নিয়ে সংসদকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও মনে করছেন রিজিজু। ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্রের কী ভাবনা, তার একটি আভাস দিয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, সরকার চাইছে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনতে।সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে কয়েক দিন আগেই পিটিআই জানায়, যদি বিচারপতি বর্মা নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন, তা হলে বাদল অধিবেশনেই তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনার কথা ভাববে কেন্দ্র। এদিকে যশবন্ত ভার্মার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর তদন্ত কমিটির তরফে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বিচারপতি জানিয়ে দেন তিনি ইস্তফা দেবেন না। ঘটনার পর তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্ট, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠায় কমিটি।
তদন্ত কমিটি:
অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে অবসরগ্রহণের দিনকয়েক আগে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করার আর্জিও জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, এই ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব পেশ হওয়ার অর্থ হল অভিযুক্ত ওই বিচারপতির অপসারণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করতে হলে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে এই প্রস্তাব গৃহীত হতে হবে। তবে অভিযুক্ত যদি দোষী না হন সেক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না, এবং প্রস্তাবটি বাতিল হবে। আর যদি দোষী সাব্যস্ত হন সেক্ষেত্রে প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর বিচারপতিকে অপসারণের জন্য তা পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে।