১৯৭১ সালে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। সূত্রের খবর, সঠিক অনুবাদের অভাব এবং কিছুকাল বাদে তাঁর প্রয়াণে সেই নোবেল আর পাওয়া হয়নি। সে বছরে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন চিলির পাবলো নেরুদা। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম সাহিত্য আকাদেমীর সচিব কৃষ্ণ কৃপালনী সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুইডিশ একাডেমির কাছে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু নোবেল কমিটি নাকি সঠিক অনুবাদ পায়নি। সে বছর তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭২-এ আর একবার তাঁর নাম নোবেল কমিটির কাছে মনোনীত হয় মরণোত্তর পুরস্কারের জন্য। সেটিতেও শিঁকে ছেড়েনি। বাংলায় দ্বিতীয় সাহিত্যে নোবেল সম্ভবনা নষ্ট হয়ে যায়।
এর আগে অবশ্য দেশের হরেক সম্মান ও স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৪৭ সালেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তারাশঙ্করকে শরৎ স্মৃতি পদক দেয়। সে বছর জুলাই মাসে জীবনের পঞ্চাশ-বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের লেখকেরা তাঁকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন। ১৯৫১ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের একটি আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ পান।
১৯৫৬ সালে চীনা লেখক লু-শুনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভারত সরকার তাঁকে চীনে পাঠায়। কিন্তু পথে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি রেঙ্গুন থেকেই ফিরে আসেন। সেই বছরই তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীন সফর, তার পরের বছর অ্যাফ্রো-এশিয়ান লেখক সঙ্ঘের কমিটি তৈরির প্রস্ততিমূলক সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর, এর পর তাসখন্দে অনুষ্ঠিত অ্যাফ্রো-এশিয়ান লেখক সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদান প্রভৃতি স্মরণীয়। ১৯৬০ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে অবসর নেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁকে সংসদের সদস্য মনোনীত করেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মশ্রী, ১৯৬৮-তে পদ্মভূষণ উপাধি পান।
এসব ছাড়াও পেয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী স্মৃতিপদক
আরোগ্য নিকেতন-এর জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার, ‘গণদেবতা’-র জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার প্রভৃতি।
তিনি ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি ছোটোগল্প-সংকলন, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধ-সংকলন, ৪টি স্মৃতিকথা, ২টি ভ্রমণকাহিনি, একটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি
প্রহসন লেখেন। তাঁর যেসব সৃষ্টি সেলুলয়েডে চিরকালীন স্বীকৃতি পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত জলসাঘর ও অভিযান, অজয় কর পরিচালিত সপ্তপদী, তরুণ মজুমদার পরিচালিত গণদেবতা, তপন সিংহ পরিচালিত হাঁসুলী বাঁকের উপকথা প্রভৃতি। এ সবের পাশাপাশি ১৯৫২ সালে বিধান পরিষদের মনোনীত সদস্য হয়েছিলেন, ১৯৬০ সালে রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হওয়ার আগে পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন।
আজ ২৩ জুলাই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন (১৮৯৮ – সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭১)।
তাঁকে প্রণাম।
—অশোক সেনগুপ্ত।
