দেশ জুড়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে চলেছে ক্রমাগত। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে পরমাণু বিদ্যুতের উপর নির্ভর করতে চলেছে জাপান সরকার। ফুকুশিমা দুর্ঘটনার এক দশক পর। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বুধবার নয়া জ্বালানি নীতি ঘোষণা করে বলেন, ‘‘ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে প্রথাগত জৈব জ্বালানির জোগান আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খরচও বেড়েছে। এই সঙ্কটের মোকাবিলায় দেশের পরমাণু শক্তি উৎপাদন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন।’’
কিশিদা জানিয়েছেন শক্তির চাহিদা মেটাতে এ বার ‘পরবর্তী প্রজন্মের পরমাণু চুল্লি’ নির্মাণ করবেন তাঁরা। বস্তুত, ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই ধীরে ধীরে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছে জাপান। সে দেশের ৩৩টি পরমাণু চুল্লির মধ্যে ১০টিতে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফুকুশিমা-কাণ্ডের পর এই প্রথম এতগুলি পরমাণু চুল্লিকে কার্যকর করেছে টোকিয়ো।
২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে হাইড্রোজেন ট্যাঙ্ক ফেটে ফুকুশিমার তিনটি পারমাণু চুল্লি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত তাপের ফলে চুল্লির ভিতরে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় অন্দরের অংশ গলে যায় ও শীতলীকরণ প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। এই চুল্লিগুলিকে ফের ঠান্ডা করতে ১০ লক্ষ টন জল ব্যবহার করা হয়েছিল সে সময়। চুল্লির তেজস্ক্রিয় বর্জ্য মিশ্রিত সেই জল শোধন প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলি বাদ দেওয়ার কাজ চলেছিল পরবর্তী কয়েক বছর ধরে। কিন্তু ট্রাইটিয়াম-সহ আরও কয়েকটি ক্ষতিকর পদার্থ সেই জল থেকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার মতো প্রযুক্তি তাদের হাতে নেই বলে জানিয়েছিল বরাত পাওয়া সংস্থা ‘টোকিয়ো ইলেকট্রিক পাওয়ার’ সংস্থা।
কয়েক বছর আগে সেই তেজস্ক্রিয় জল প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাপান সরকার। কিন্তু সে দেশের পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ও মৎস্যজীবীরা তীব্র আপত্তি তোলে। চলতি বছর মার্চ মাসে ভূমিকম্পের সময় উত্তর-পূর্ব জাপানের মিয়াগির ওনাগাওয়া পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছিল। ফুকুশিমা-কাণ্ডের পর ধীরে ধীরে পরমাণু শক্তির উপর নির্ভরতা কমাতে সক্রিয় হয়েছিল টোকিয়ো। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে এ বার শুরু হল ‘উলটপুরাণ’।