জাতীয় সংসদের নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত)। তবে একক শক্তিতে নয়। পাঁচ দফা দাবিকে সামনে রেখে ‘সমমনোভাবাপন্ন’ আরও সাতটি রাজনৈতিক দলের জোট গড়ে। রাজধানী ঢাকায় সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানিয়ে দিলেন জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ।
হামিদুর বুধবার বলেন, বলেন, ‘‘আট দল সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে। অন্য দলের জন্যও জোটের দরজা উন্মুক্ত রয়েছে।’’ একদা বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির সহযোগী ছিল। কিন্তু গত বছর জুলাই-অগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ-হীন ভোটের ময়দানে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। জামাত এ বার সেই ইসলামপন্থী দলগুলিকে নিয়ে আলাদা ভাবে জোট গড়ে ভোটে লড়তে চাইছে।
গত কয়েক মাস ধরেই গণভোট-সহ বিভিন্ন দাবিতে জামাতের পাশে দাঁড়িয়ে যৌথ ভাবে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে সাতটি ইসলামপন্থী দল— ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি। আগামী বছরের সংসদ নির্বাচনে তাদের নিয়ে জোট গড়ার বার্তা দিয়েছেন জামাত নেতা হামিদুর।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস এবং নেজামে ইসলাম পার্টির নেতারা গত জুলাই মাসে বিএনপির সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। ‘চরমোনাইর পীর’ নামে পরিচিত ইসলামি আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম সে সময় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, খালেদার দলের সঙ্গে তাঁদের সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জামাতের দিকে ঝুঁকে পড়ে তারা। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার জমানায় জামাতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। গত বছরের ৫ অগস্ট হাসিনা সরকারের পতন এবং মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসার পর জামায়াত এবং ছাত্র শাখা ‘ইসলামি ছাত্র শিবিরের’ উপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
- দিল্লিতে অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, কী নিয়ে আলোচনা?
- ‘লালকেল্লায় প্রত্যাঘাত করেছি আমরা’! বিস্ফোরণের ‘কৃতিত্ব’ নিলেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী
এর পরে গত এক বছর ধরে ধীরে ধীরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর প্রভাব বেড়েছে ‘১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি’ হিসেবে পরিচিত জামায়াতের। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি, বিভিন্ন বামপন্থী শক্তি এমনকি, অন্যান্য ইসলামি দলগুলিও তা নিয়ে ক্ষুব্ধ। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকা, জাহাঙ্গিরনগর, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে পর্যুদস্ত করে জয়ী হয়েছে ইসলামি ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। জামাতের আমির (প্রধান) শফিকুর রহমানের উদ্যোগে এর পরেই জোরকদমে জোট গড়ার উদ্যোগ শুরু হয়। সূত্রের খবর, ৩০০ আসনে জাতীয় সংসদে জামাত ২০০টিতে প্রার্থী দিতে পারে। বাকি ১০০টি আসন ছাড়া হতে পারে সহযোগীদের।

