কমিশনের উপর মানুষের আস্থা হারানো দুর্ভাগ্যজনক, নিজে চাইলে নিরপেক্ষ থাকা যায়: মীরা পাণ্ডে

আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার ভার যার কাঁধে, সেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করছে বিরোধীরা। মনোনয়ন জমা এবং তা প্রত্যাহার পর্বে রাজ্যে হিংসার রমরমার কারণে সাধারণ মানুষও কমিশনের উপর আস্থা হারাচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। সেই আবহেই প্রাক্তন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের মন্তব্য, ‘‘নিজে চাইলে নিরপেক্ষ অবস্থান টিকিয়ে রাখা সম্ভব।’’ পাশাপাশি, কমিশনের উপর আস্থা হারানোকে দুর্ভাগ্যজনক বলেও মনে করেন তিনি।

২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মীরা। সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে যদিও আদালতে মীরার জয় হয়। সেই মীরারই উত্তরসূরি রাজীব সিংহ। আদালত থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দল— সকলেই তাঁর সমালোচনায় মুখর। এক দশক আগে কমিশনারের দায়িত্ব সামলানো মীরার যদিও মত, রাজ্যের ভোটে অল্পবিস্তর হিংসার ঘটনা বরাবরই ঘটেছে। মীরার কথায়, ‘‘এই যে ঘটনাগুলি ঘটছে, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, মানুষ মনে করছে কমিশন তার দায়বদ্ধতা থেকে সরে যাচ্ছে। সেটা নয়। অল্পবিস্তর গোলমাল সব সময়েই হয়। কখনও বেশি, কখনও কম। এর মধ্যে দিয়েই আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয়ে আসছে। তাই আস্থা হারানোটা আমি মনে করি দুর্ভাগ্যজনক।’’

বিরোধীদের অভিযোগ, রাজীবের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে মীরার বক্তব্য, ‘‘নিজে চাইলে নিরপেক্ষ থাকা যায়। নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করা যায়। ইচ্ছে থাকলে সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করা সম্ভব।’’ পক্ষপাতদুষ্টতা নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে মীরা বলেন, ‘‘প্রতিটা ভোটেই অভিযোগ ওঠে। তার নিষ্পত্তিও হয়। সব কিছুর একটা পদ্ধতি আছে। কমিশনকেও সেই সময়টা দিতে হবে। যাতে কমিশনার অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে পারেন। কোথায় কত বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সেটা কমিশনকেই ঠিক করতে হবে। এটা কমিশনেরই এক্তিয়ার।’’

বাহিনী নিয়ে একদা রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন। মূলত তাঁর উদ্যোগেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। মীরা আদায় করে ছেড়েছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনী। ২০১৩ সালে বাংলায় পাঁচ দফায় পঞ্চায়েত ভোট হয়, ৮০০ কোম্পানিরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল সেই ভোটে। এ বারও সেই কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক পারদ চড়ছে। এ প্রসঙ্গে মীরার মত স্পষ্ট। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের হাতে এত পুলিশকর্মী থাকে না, যাঁদের পঞ্চায়েত ভোটে গোটা রাজ্যে মোতায়েন করা যাবে। তাই মানুষকে যাতে নিরাপদে ভোট দেওয়ার সুযোগটুকু দেওয়া যায়, সে জন্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন।’’ তাঁর মতে, ‘‘সাধারণ মানুষের ধারণা, কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে নির্ভয়ে ভোট দেওয়া যায়।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.