‘যোগ্য’ তালিকা কি চূড়ান্ত হল? ১৮০৩ জনের নাম বাদ দিয়ে ১৫৪০৩ জন শিক্ষকের নতুন তালিকা বাছল শিক্ষা দফতর

‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগি’ নয়, এমন শিক্ষকদের তালিকা থেকে আরও ১৮০৩ জনের নাম বাদ দিয়ে দিল রাজ্য সরকার। নতুন করে তৈরি করা হল ১৫ হাজার ৪০৩ জন শিক্ষকের নামের তালিকা। সেই নতুন তালিকা ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) সূত্রের খবর। নতুন তালিকার ভিত্তিতেই আগামী দিনে আইনি কার্যকলাপ এগোনোর কথা ভাবা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ‘যোগ্য’দের তালিকা অবশেষে চূড়ান্ত করল রাজ্য সরকার?

২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্যানেল বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে চাকরি গিয়েছে ২৫ হাজার ৭৩৫ জনের। এঁদের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার (১৮,৪১৮)। এঁদের মধ্যে যাঁরা ‘দাগি’, তাঁদের বাদ দিয়ে ১৭ হাজার ২০৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার তালিকা তৈরি করা হয়। গত ১৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে সেই তালিকা জমা দেয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এই ১৭ হাজার ২০৬ জনকে ‘দাগি নন’ বলে চিহ্নিত করা হয়। তাঁদের আপাতত স্কুলে যেতে দেওয়ার আর্জি জানায় পর্ষদ। আদালত সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে জানিয়েছিল, ‘অযোগ্য নন’ এমন শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের সমস্যার কথা ভেবে এই নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তবে চলতি বছরের মধ্যেই নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে রাজ্যকে।

কিন্তু ১৭,২০৬ জনের মধ্যেও কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র-সহ একাধিক বিষয়ে সমস্যা রয়েছে বলে জানতে পেরেছে পর্ষদ। ফলে আরও ১৮০৩ জনকে বাদ দিয়ে নতুন করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা মঙ্গলবার রাত থেকেই জেলায় জেলায় ডিআই দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

‘যোগ্য-অযোগ্য’ তালিকা প্রকাশের দাবি নিয়ে এসএসসি দফতরে অবস্থানে বসেছেন চাকরিহারারা। গত দু’দিন ধরে বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে। এসএসসি দফতর ঘেরাও করে রেখেছিলেন তাঁরা। রাতভর ভিতরে আটকে ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান। পুলিশের সঙ্গে চাকরিহারাদের ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। চাকরিহারাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, দু’সপ্তাহের মধ্যে এই তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২১ এপ্রিল সেই দু’সপ্তাহ সময়সীমা শেষ হতেই তালিকার দাবিতে কমিশনের দফতরের সামনে অবস্থান শুরু করেন চাকরিহারারা। তার পরেই আন্দোলন ধস্তাধস্তির পর্যায়ে পৌঁছোয়। রাতে এসএসসি জানিয়েছিল, আইন মেনে তারা কাজ করবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের নড়চড় হবে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমাফিক যাঁরা বেতন পাচ্ছেন, কেবল তাঁরাই বেতন পাবেন এবং চাকরি করবেন। তালিকা প্রকাশের বিষয়ে কিছু না বলায় অসন্তোষ আরও বাড়ে। দু’দিন ধরে নিজের দফতরে আটকে থাকার পর বুধবারই ‘ছাড়া’ পান এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। কলকাতা হাই কোর্টে এই সংক্রান্ত একটি মামলা চলছিল। সেখানে তাঁকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। তাই তাঁকে দফতর থেকে বেরোতে দেওয়া হয়। তবে অবস্থান চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.