চিকিৎসক হওয়ার প্রবেশিকায় চাহিদা এবার কম?

যথেষ্ঠ আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য বা স্বাস্থ্যবীমা না থাকলে কলকাতার ঝাঁ চকচকে বেসরকারি হাসপাতালে লোকের চিকিৎসা করানোর অবকাশ কম থাকে। যাঁদের তা আছে, পারতপক্ষে কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলোয় ঘেঁষতে চান না। জেলার হাসপাতালগুলোর অবস্থা তো আরও বেহাল। এর একটা বড় কারণ, চিকিৎসকের অভাব। জুনিয়র ডাক্তাররা ধরে রেখেছেন চিকিৎসা পরিষেবার মূল কাঠামো।

এরকম অবস্থায় বেশ কয়েক বছর ধরে রাজস্থানে দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি নামী ইংরেজি দৈনিকের ভ্রাতৃপ্রতীম সাংবাদিক অর্পিত বসুর কাছে শুনলাম, কলকাতার তুলনায় জয়পুরে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর হাল অনেক আশাব্যঞ্জক। কেন, সেটাও আমাকে বিস্তারিত জানাল ও।

ভারতে চিকিৎসকদের গড় আয় কত? নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে দেখলাম তাঁদের বাৎসরিক আয় এরকম— *নিউরোসার্জন— আড়াই কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা।
*কার্ডিওলজিস্ট— দেড় কোটি থেকে ৪ কোটি টাকা। *অর্থোপেডিক সার্জন— ১ কোটি থেকে ৩ কোটি টাকা। *রেডিওলজিস্ট— ১ কোটি থেকে আড়াই কোটি টাকা। *ডার্মাটোলজিস্ট— ১ কোটি থেকে ২ কোটি টাকা।

লোক বাড়ছে। বাড়ছে রোগের ধরণ ও অসুস্থর সংখ্যা। বাড়ছে চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা। তাঁদের উপার্জনও যথেষ্ঠ। কিন্তু আমাদের অনেকের প্রায় অজান্তে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গেল। রবিবার ছিল চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় প্রবেশিকা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট, অর্থাৎ নিট-ইউজি। এতে মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল ৫,৪৫৩। দেখা গেল, গত পাঁচ বছরে এবারই আবেদন করেও গড়হাজির পরীক্ষার্থীর শতাংশ সবচেয়ে বেশি। ’২১, ’২২, ’২৩, ’২৪ ও ’২৫— এ আবেদন করেও ‘নিট’-এ হাজির পরীক্ষার্থীর শতাংশ ছিল যথাক্রমে ৯৫.৬, ৯৪.৩, ৯৭.৭, ৯৮ ও ৯১.৪ শতাংশ।

এই পরীক্ষার আয়োজক ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) এই তথ্যের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিশদ তথ্যও পেশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত ৫ বছরে ‘নিট’-এ বসার জন্য নাম রেজিস্ট্রেশন করেছেন যথাক্রমে ১৬.১ লক্ষ, ১৮.৭ লক্ষ, ২০.৯ লক্ষ, ২৪.১ লক্ষ ও ২২.৮ লক্ষ। আর এই ৫ বছরে ‘নিট’-এ বসেছেন যথাক্রমে ১৫.৪ লক্ষ, ১৭.৬ লক্ষ, ২০.৪ লক্ষ, ২৩.৩ লক্ষ ও ২০.৮ লক্ষ।

গত বছর ২৯ নভেম্বর লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা জানিয়েছিলেন ভারতে প্রতি ৮১১ লোকপিছু একজন চিকিৎসক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) নাকি সুপারিশ করেছে, প্রতি ১ হাজার লোকপিছু একজন চিকিৎসক থাকা দরকার। অর্থাৎ, মন্ত্রীমশাইয়ের ইঙ্গিত, ভারতের অবস্থান এদিক থেকে যথেষ্ঠ আশাব্যঞ্জক। মন্ত্রীমশাইয়ের দাবিতে সন্দেহ প্রকাশ করি কী করে? তবে ২০১৭-তে পিটিআইয়ের দেওয়া তথ্যে দেখছি, ১ হাজার ৬৬৮ লোকপিছু ভারতে চিকিৎসক মাত্র একজন। এই সাত বছরে অনুপাতটা এত উন্নত হয়ে গেল?

এনটিএ-র তথ্যে একটা জিনিস কি লক্ষ্য করেছেন, ’২১ থেকে ৩ বছর ধরে বাড়ার পর গতবারের তুলনায় এবার অর্থাৎ ’২৫-এ ‘নিট’-এ রেজিস্ট্রেশন এবং পরীক্ষার্থীর উপস্থিতি—দুটোই বেশ কিছুটা কমে গিয়েছে? কেন এই হাল? ভারতের কোন কোন রাজ্যে নিট-এর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, ভারতে নারী-পুরুষ চিকিৎসকের অনুপাত কীরকম— এসবের বিশ্লেষণও যথেষ্ঠ আকর্ষনীয়। তবে, সেই বিশদে আর যাব না। গেলে আপনারাই ধরে আমাকে মারবেন সব গুলিয়ে দেওয়ার জন্য!
—অশোক সেনগুপ্ত,৫-৫-২০২৫।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.