মঙ্গলবার চেন্নাই সুপার কিংসের গড়া ১৭২ রান চেজ করতে গুজরাত টাইটান্সের ল্যাজেগোবড়ে অবস্থা হয়েছিল। ঠিক তেমনই চিপকের বাইশ গজে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের গড়া ১৮২ রান তাড়া করতে গিয়ে খেই হারাল লখনউ সুপার জায়ান্ট। কে এল রাহুল চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পরেও এই দলটা দাপটের সঙ্গে খেলছিল। ক্রুনাল পান্ডিয়া দারুণ ভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। রানের মধ্যে ছিলেন কাইল মেয়ার্স, নিকোলাস পুরান, মার্কাস স্টৈনিসরা। কিন্তু আসল সময় গৌতম গম্ভীরের দলের সব তারকা ব্যর্থ। একা লড়লেন অস্ট্রেলিয়ার মার্কাস স্টৈনিস। তবে সেটা যথেষ্ট ছিল না। কারণ ম্যাচে ফারাক গড়ে দিলেন অখ্যাত আকাশ মাধওয়াল। তাঁর বোলিং ফিগার চোখে পড়ার মতো। ৩.৩-০-৫-৫। ইকনোমি ১.৪২। সঙ্গে রয়েছে ১৭টি ডট বল। তাঁর আগুনে পেস বোলিংয়ের সৌজন্যে বিপক্ষকে ১০১ রানে গুঁড়িয়ে ৮১ রানে জিতে চলতি আইপিএল-এর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চলে গেল মুম্বই। ২৬ মে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে নামবে গতবারের আইপিএল জয়ী গুজরাত।
নক-আউট ম্যাচে ১৮২ রান চেজ করা সবসময় সহজ নয়। তবে তাই বলে লখনউ এমন অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করবে সেটা কোনও ক্রিকেট পণ্ডিত কল্পনাও করতে পারেননি। শুরু থেকেই লখনউয়ের ব্যাটিংকে চাপে রাখেন উত্তরাখণ্ডের হয়ে মাত্র ১০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এই যুবক। প্রেরক মানকড়কে ফিরিয়ে বিপক্ষকে প্রথম ধাক্কা দেন আকাশ। কিছুক্ষণ পর ক্রিস জর্ডনের বলে আউট হয়ে ফিরে যান ফর্মে থাকা কাইল মেয়ার্স। ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় লখনউ। স্টৈনিস লড়লেও অন্য দিক থেকে একের পর এক উইকেট চলে যায়। ক্রুনালকে আউট করেন অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার পিয়ুশ চাওলা। এরপরেই শুরু হয়ে যায় বাইশ গজে আকাশের গর্জন। ১০তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে আয়ুস বাদোনি ও নিকোলাস পুরানকে ফিরিয়ে মুম্বইয়ের আইপিএল জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলেন আকাশ।
৭৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর জয়ের আশা এমনিতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাই বলে লখনউয়ের ব্যাটাররা এমন হারাকিরি করবে! ২৭ বলে ৪০ রানে থাকা স্টৈনিস রান আউট হওয়ার পর, ফের একইরকম ভাবে রান আউট হলে কৃষ্ণাপ্পা গৌতম। ফলে লখনউয়ের অল আউট হওয়া ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। কারণ, ২৯ বছরের আকাশ যে বিপক্ষের তারকা ব্যাটিংকে একাই বুঝে নিয়েছিলেন।
তবে হেলায় জিতলেও, চলতি প্রতিযোগিতায় ফের একবার ব্যর্থ হলেন ‘হিটম্যান’। আর এক উঠতি তারকা ঈশান কিশানও বড় রান পেলেন না। রোহিতকে আউট করলেন আফগানিস্তানের নবীন। এর কিছুক্ষণ পরেই যশ ঠাকুরের বলে আউট হয়ে ফিরে যান ঈশান। ফলে তবে ৩৮ রানেই দুই ওপেনারকে হারায় মুম্বই। তবে তাতে কি! ক্যামেরুন গ্রিন ও সূর্য কুমার যাদব তো ছিলেনই। দুই মারকুটে চাপের মুখে চুপসে না গিয়ে পালটা মার দিতে শুরু করলেন। চোখের পলকে উঠে গিয়েছিল ৬৬ রান। তখন মনে করা হচ্ছিল দুই ব্যাটার ক্রিজে থাকলে মুম্বই স্কোরবোর্ডে অন্তত ২০০ রান তুলে দেবে!
কিন্তু ঘোর অনিশ্চয়তার খেলায় কখন যে ম্যাচের রঙ বদলে যায় কেউ জানে না! ১১তম ওভারে বল হাতে ফের জ্বলে উঠলেন বিতর্কিত আফগান বোলার। সেই ওভারের চতুর্থ বলে ব্যক্তিগত ২০ বলে ৩৩ রানে ফিরলেন সূর্য। অহেতুক মারতে গিয়ে কৃষ্ণাপ্পা গৌতমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন মুম্বই তারকা। সেই ধাক্কর রেশ কাটার আগেই ফের ডাগআউটে থাকা রোহিতের মুখ গোমরা হয়ে গেল। কারণ সেই ওভারের শেষ বলে নবীনের ইন সুইং বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান অজি তারকা। গ্রিন ২৩ বলে ৪১ রানে ফিরলেন।
এদিকে তিলক ভার্মা ২২ বলে ২৬ রান করেছেন। মুম্বইকে শেষদিকে টেনেছেন নেহাল ওয়াধেরা। তিনি করেন ১২ বলে ২৩ রান। ইনিংসে রয়েছে দুটি চার ও দুটি ছয়। নবীন নিয়েছেন ৩৮ রানে ৪ উইকেট। অন্যদিকে ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন যশ ঠাকুর। তবে এতে লাভ হল না। দুই বোলারের দাপটের পরেও, ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য এবারও আইপিএল জয় সঞ্জীব গোয়েঙ্কার কাছে অধরাই থেকে গেল। এর আগে দুই দলের সাক্ষাতে প্রতিবারই জিতেছিল লখনউ। গত বছর মুম্বইকে একবার হারিয়েছিল কে এল রাহুলের দল। এবার তো লিগ পর্বে দু’বারই মুম্বই হারের মুখ দেখেছিল। তবে মোক্ষম ম্যাচে বাজি জিতল রোহিতের মুম্বই। সৌজন্যে আকাশ। বাইশ গজে তাঁর গর্জনের জন্য ষষ্ঠবারের জন্য আইপিএল জয়ের স্বপ্ন দেখছে ‘আমচি মুম্বই’।