পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীদের শিবির ভাঙতে উদ্যোগ! হস্তক্ষেপ করল না হাই কোর্ট

দিল্লিতে যমুনা নদীর ধারে গজিয়ে ওঠা পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীদের শিবির ভেঙে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদ (ডিডিএ)। ওই শরণার্থী শিবির না ভাঙার জন্য আবেদনও হয় দিল্লি হাই কোর্টে। তবে সেই আবেদনটি শুক্রবার খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।

মামলার শুনানিতে উঠে আসে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশমতো যমুনা নদীকে রক্ষা করতে ওই এলাকাকে দখলমুক্ত করার জন্য চাপ ছিল ডিডিএ-র উপরে। এই অবস্থায় হাই কোর্ট জানিয়েছে, মানবিক এবং সহানুভূতিশীলতার দিকগুলি বিবেচনা করা হলেও এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হবে না। বস্তুত, দিল্লির মঞ্জু কা টিলা এলাকায় যমুনার পাড়ে প্রায় ৮০০ মানুষ বাস করেন। এই অঞ্চলটি যমুনার প্লাবনভূমির মধ্যে পড়ে।

আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ অনুসারে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ,“বাস্তুতন্ত্রের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ যমুনার প্লাবনভূমি রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সুপ্রিম কোর্ট, জাতীয় পরিবেশ আদালত এবং এই আদালতের নির্দেশ মেনে চলার জন্যও প্লাবনভূমি রক্ষা করা প্রয়োজন। বাস্তুতন্ত্র রক্ষা, দিল্লিবাসী এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য সুস্থ পরিবেশের মৌলিক অধিকার রক্ষা করারই এই নির্দেশের লক্ষ্য।”

এই মামলায় কেন্দ্র এবং ডিডিএ-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শুনেছে আদালত। শরণার্থীদের পুর্নবাসন সংক্রান্ত বিষয়ও আদালতে উঠে আসে। ওই সময় কেন্দ্রীয় আবাসন এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রক আদালতকে জানিয়েছিল, এই বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে ডিডিএ-র এক্তিয়ারভুক্ত। এতে মন্ত্রকের কোনও ভূমিকা নেই। পরে আদালতের পরামর্শমতো একটি বৈঠকেও বসে ডিডিএ। তবে সেখানে মন্ত্রকের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে আদালতে হলফনামা দিয়ে জানানো হয়, শরণার্থীরা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্যে আবেদন জানাতে পারেন। এর বাইরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কিছু করণীয় নেই। পুনর্বাসনের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্ত নয়।

শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের এই গা ছাড়া মনোভাব নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করেছে আদালত। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “শরণার্থীদের পুনর্বাসন এবং অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের আন্তরিক চেষ্টা করে আদালত। তবে সেটি ফলপ্রসূ হয়নি। আপাত ভাবে মনে হচ্ছে, আমলাতান্ত্রিক স্তরে একে অন্যের উপর দায়িত্ব ঠেলে জন্য এটি হয়েছে।” দিল্লি হাই কোর্ট জানিয়েছে, শরণার্থীদের এই দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য কোনও নীতি প্রণয়নের কাজ আদালত করতে পারে না। শরণার্থীদের ওই এলাকা দখল করে থাকার কোনও অধিকার নেই বলেও জানিয়েছে আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.