ভারতসেরা মোহনবাগান, পর পর দু’বার, দুই ম্যাচ বাকি থাকতে ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন সবুজ-মেরুন

সেই দিমিত্রি পেত্রাতোস। মোহনবাগান জনতার নয়নের মণি। গত মরসুমে দুর্দান্ত খেলেছিলেন। কিন্তু এ বার চোট পাওয়ার পরে গোল পাচ্ছিলেন না। চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু হচ্ছিল না। সেই পেত্রাতোসের গোলেই লিগ-শিল্ড জিতল মোহনবাগান। সংযুক্তি সময়ে গোল করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেন তিনি। গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হল গোটা ম্যাচ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মুখে হাসি ফুটল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের। পর পর দু’বার আইএসএল লিগ-শিল্ড জিতল মোহনবাগান। ঘরের মাঠে ওড়িশাকে হারিয়ে ভারতসেরা হল তারা। দু’ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান। পেত্রাতোসের গোলের পর মাঠে নেমে উচ্ছ্বাসে ভাসলেন কোচ হোসে মোলিনা। তিনি সাধারণত শান্ত থাকেন। সেই মোলিনার উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিল, এই জয়ের গুরুত্ব তাঁর কাছে কতটা।

৯৩ মিনিটের মাথায় বাঁ পায়ের শটে গোল করে সোজা গ্যালারির কাছে ছুটে গেলেন পেত্রাতোস। সবুজ-মেরুন সমর্থকদের কাছে। যে সমর্থকেরা কঠিন সময়ে তাঁর উপর বিশ্বাস রেখেছেন, ভরসা দেখিয়েছেন, সেই জনতার সঙ্গে উল্লাস করলেন। দেখা গেল পেত্রাতোসের পরিচিত ‘স্টেনগান’ সেলিব্রেশন। গোটা দল তখন উচ্ছ্বাসে ব্যস্ত। সকলে সকলকে জড়িয়ে ধরছেন। সাপোর্ট স্টাফেরাও আনন্দে উদ্বেল। ঠিক একই অবস্থা যুবভারতীর হাজার হাজার দর্শকের। তাঁরা এই মুহূর্তেরই অপেক্ষা করছিলেন। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মাতলেন তাঁরা। যুবভারতীতে তখন কানপাতা দায়।

কয়েক মিনিট পরে রেফারি হরীশ কুন্ডু খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই উল্লাসের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। পেত্রাতোসের চোখে জল। যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাঁর গোলেই ভারতসেরা হয়েছে দল। চোখে জল সমর্থকদের। প্রিয় ক্লাবের সাফল্য চোখের জলে উদ্‌যাপন করছেন। মাঠে নেমে পড়লেন ফুটবলারদের স্ত্রী, বান্ধবীরাও। সতীর্থদের কাঁধে চাপলেন পেত্রাতোস। নায়ককে বরণ করে নিলেন শুভাশিস বসু, গ্রেগ স্টুয়ার্টেরা। ২২ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ-শিল্ড জিতলেও এখনই তা পাচ্ছে না মোহনবাগান। ৮ মার্চ যুবভারতীতে নিজেদের শেষ ম্যাচে শিল্ড তুলবে তারা।

খেলার শুরু থেকেই মোহনবাগান আক্রমণাত্মক ছিল। শুরুতে জেমি ম্যাকলারেনের সঙ্গে স্টুয়ার্টকে জুড়ে দিয়েছিলেন কোচ মোলিনা। প্রথমার্ধেই বেশ কয়েক বার গোলের কাছে পৌঁছে যায় মোহনবাগান। কিন্তু মনবীর সিংহ কয়েকটি সহজ সুযোগ ফস্কান। বেশ কয়েক বার গোলের কাছে পৌঁছে গেলেও গোল আসছিল না। বিরতিতে গোলশূন্য অবস্থায় সাজঘরে যায় দু’দল।

দ্বিতীয়ার্ধেও একই ছবি। বার বার বাগানের আক্রমণ। পুরোপুরি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছিল ওড়িশা। গোল বাঁচাতেই ব্যস্ত ছিল তারা। গোল আসছে না দেখে পেত্রাতোস ও জেসন কামিংসকেও নামিয়ে দেন কোচ মোলিনা। পুরোপুরি আক্রমণের পথে চলে যান তিনি। তার পরেও গোলের মুখ খোলা যাচ্ছিল না। ৮৪ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে ম্যাকলারেনকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন ওড়িশার ডিফেন্ডার মোর্তাদা ফল। ১০ জনে হয়ে যায় ওড়িশা। সংযুক্তি সময়ে বক্সের বাইরে থেকে পেত্রাতোসের সেই দুরন্ত গোল। তার পরেই বাঁধ ভাঙল যুবভারতীতে। চ্যাম্পিয়ন লেখা টি-শার্ট পরে মাঠ ঘুরলেন ফুটবলারেরা। দর্শকদের সঙ্গে সাফল্য উদ্‌যাপন করলেন তাঁরা।

এই প্রথম বার আইএসএলের ইতিহাসে কোনও দল ৫০-এর বেশি পয়েন্ট পেল। এখনও দু’টি ম্যাচ বাকি বাগানের। কাজও বাকি। গত বার লিগ-শিল্ড জিতলেও আইএসএল কাপ জিততে পারেনি মোহনবাগান। এ বার সেই ট্রফি চান মোলিনা। খেলা শেষে কোচের মুখ বুঝিয়ে দিল, জোড়া ট্রফি না জিতে থামতে চাইছেন না তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.