পাকিস্তান থেকে সব ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রক! সরাসরি কিংবা ঘুরপথেও ঢুকবে না পাক পণ্য

সরাসরি হোক বা ঘুরপথে, পাকিস্তানি পণ্য কোনও ভাবেই এ দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তান থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, সমস্ত আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত। বাণিজ্য মন্ত্রক থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে তৈরি কোনও পণ্য সরাসরি বা ঘুরপথে আমদানি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং সরকারি নীতির স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না-হওয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এই নির্দেশিকার কোনও ব্যতিক্রমের জন্য অবশ্যই ভারত সরকারের আগাম অনুমতি নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একাংশের মতে, পাকিস্তান থেকে সরাসরি খুব বেশি পণ্য ভারতে আসে না। তবে ঘুরপথে দুবাই হয়ে কিছু পণ্য ভারতে আসত। বিশেষত, পোশাক, মশলা বা ছোট যন্ত্রাংশের মতো কিছু পণ্য ঘুরপথে ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করত। বাণিজ্যমহলের কারও কারও মতে, ঘুরপথেও যাতে কোনও পাকিস্তানি পণ্য ভারতে প্রবেশ না করে, তা নিশ্চিত করতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

পাকিস্তান থেকে সব ধরনের আমদানি বন্ধের বিজ্ঞপ্তি।

বস্তুত, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় জঙ্গিহানার পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্কে ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করেছিল। ওই সময়ে ফল, সিমেন্ট, পেট্রোপণ্য, আকরিক-সহ পাকিস্তান থেকে আসা বেশ কিছু পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছিল ভারত। বাণিজ্যিক ভাবে ভারতের অন্যতম পছন্দের দেশ (মোস্ট ফেভার্‌ড নেশন)-এর তালিকা থেকেও পাকিস্তানকে সরিয়ে দিয়েছিল ভারত। তার পর থেকে গত কয়েক বছরে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে পাকিস্তান থেকে মাত্র ৪ লক্ষ ২০ হাজার ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল ভারত। এক বছর আগেও যে পরিসংখ্যান ছিল, তার থেকে ২০ লক্ষ ডলারেরও কম মূল্যের আমদানি হয়েছিল ওই সময়ে।

পাকিস্তানি পণ্য আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজের উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ শিপিং’-এর তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের পতাকা থাকা কোনও জাহাজ ভারতীয় বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না। একই রকম ভাবে কোনও ভারতীয় জাহাজও পাকিস্তানের কোনও বন্দরে যাবে না।

ভারতের কোনও বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তি।

গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরে বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি বৈঠকে বসেছিল। ওই বৈঠকের পর পরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কূটনৈতিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। তার মধ্যে অন্যতম অটারী সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। বস্তুত, অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দু’দেশের মধ্যে অন্যতম বাণিজ্যপথ ছিল। তার পরের দিন পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ করে। ওই সময়ে ইসলামাবাদ জানিয়েছিল, তারা ভারতের সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তৃতীয় কোনও দেশ হয়েও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হবে না বলে জানিয়েছিল পাকিস্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.