বাবা-মা দু’জনেই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। থাকতেন বেঙ্গালুরুতে। সেই শহরে এখনও থাকেন তাঁর দাদু-দিদা। সেই রাচিন রবীন্দ্রের ব্যাটে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে গেল ভারত। সোমবার নিউ জ়িল্যান্ড বাংলাদেশকে হারানোয় ভারতকে নিয়েই তারা শেষ চারে উঠে গেল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ছুটি হয়ে গেল বাংলাদেশ এবং আয়োজক দেশ পাকিস্তানের। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের তোলা ২৩৬/৯-এর জবাবে ৪৬.১ ওভারে সেই রান তুলে দিল নিউ জ়িল্যান্ড।
ভারত এবং নিউ জ়িল্যান্ড দুই দেশেরই এখন চার পয়েন্ট। দুই দেশই হারিয়েছে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানকে। গ্রুপের প্রথম দুই দল হিসাবে ভারত এবং নিউ জ়িল্যান্ডের শেষ করা নিশ্চিত। কারণ পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচে যে-ই জিতুক, তার চার পয়েন্ট হবে না। তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকেও ছিটকে গেল তারা। এ বার ভারত-নিউ জ়িল্যান্ড ম্যাচে ঠিক হবে গ্রুপের শীর্ষে কোন দেশ শেষ করবে।
ত্রিদেশীয় সিরিজ়ে ক্যাচ ধরতে গিয়ে কপাল ফেটে গিয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পারবেন কি না সেটা নিয়েই সংশয় ছিল। চোট না সারায় প্রথম ম্যাচে খেলতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরেই শতরান করলেন রাচিন। কেন তাঁকে কিউয়িরা এত গুরুত্ব দেয়, তা আর এক বার বোঝা গেল। আইসিসি প্রতিযোগিতায় মাত্র ১১টি ম্যাচ খেলে চারটি শতরান হল রাচিনের। নিউ জ়িল্যান্ডের কোনও ক্রিকেটারের এই কৃতিত্ব নেই। ২০২৩ এক দিনের বিশ্বকাপে তিনটি শতরান করেছিলেন রাচিন।
নিউ জ়িল্যান্ডের ওয়েলিংটনে এক ভারতীয় পরিবারে জন্ম রাচিনের। তাঁর বাবা রবি কৃষ্ণমূর্তি পেশায় সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। মা দীপা গৃহকর্ত্রী। ১৯৯০-এর দশকে বেঙ্গালুরু থেকে ওয়েলিংটনে চলে আসেন রবি। সেখানে তিনি হাট হক্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। বেঙ্গালুরুতে থাকায় সময়েই ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক ছিল রবির। অল্পবিস্তর খেলাধুলোও করেছেন। ছেলেকেও ক্রিকেটার করার ইচ্ছা ছিল। পরিবারের সমর্থনে নিজেকে ক্রমশ ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে থাকেন রাচিন। নিউ জ়িল্যান্ডের হয়ে দু’বার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন। এক বার ২০১৬-য়, আর একবার ২০১৯-এ। দেশের হয়ে এখন তিন ফরম্যাটেই নিয়মিত খেলছেন।
সোমবার রাওয়ালপিন্ডিতে টস জিতে নিউ জ়িল্যান্ডের আগে বল করার সিদ্ধান্ত সফল। প্রথমে ব্যাট করে সমস্যায় পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে আলোর নীচে খেলতে সমস্যা হয়নি নিউ জ়িল্যান্ডের। ২৩৭ রান তাড়া করতে নেমে অনায়াসে এগিয়ে তাদের ইনিংস। তবে শুরুটা হয়েছিল হোঁচট খেয়ে। আগের ম্যাচের শতরানকারী উইল ইয়ংকে এ দিন প্রথম ওভারেই ফেরান তাসকিন আহমেদ। আউট করে তাসকিন এমন উল্লাস করলেন যেন ম্যাচ পকেটে চলে এসেছে। চতুর্থ ওভারে কেন উইলিয়ামসন (৫) ফিরতে উল্লাস আরও বাড়ল। কিছুটা হাল ধরেছিলেন রাচিন এবং ডেভন কনওয়ে (৩০)। তবে দলের ৭২ রানে কনওয়ে ফিরতে আবার চাপে পড়ে নিউ জ়িল্যান্ড।
তার পরেই বাস্তবে ফিরতে হল বাংলাদেশকে। উইকেটের উপর জমে বসলেন রাচিন এবং টম লাথাম। এক দিনের ক্রিকেটে জিততে গেলে মাঝের দিকের ওভারে উইকেট নিতে হয়। সেটাই পারলেন না বাংলাদেশের বোলারেরা। চতুর্থ উইকেটে ১২৯ রানের জুটি গড়লেন রাচিন-লাথাম। খেললেন প্রায় ২৩ ওভার। ওখানেই ছন্দ নষ্ট হয়ে গেল বাংলাদেশের। মাঝে রানের গতি কমিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনারেরা। তবে আচমকাই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বল করতে এসে এক ওভারে ১২ রান দিয়ে রান রেট আবার বাড়িয়ে দিলেন।
দুশো পেরোনোর পর নিউ জ়িল্যান্ড হারায় রাচিন (১১২) এবং লাথামকে (৫৫)। তবে সমস্যায় পড়ার কথাই ছিল না। দলকে অনায়াসে জিতিয়ে দিলেন গ্লেন ফিলিপস এবং মাইকেল ব্রেসওয়েল।
রাওয়ালপিন্ডিতে এটাই ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম খেলা। ২০২৩ সালের পর এখানে প্রথম বার খেলা হল। অতীতে এই মাঠে রানের বন্যা দেখা গিয়েছে। তবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং জাকের আলি বাদে আর কারও ব্যাটে রান দেখা যায়নি। মিডল অর্ডার আবার সমস্যায় ফেলে বাংলাদেশকে।
শুরুটা খারাপ করেননি নাজমুল এবং তানজিদ হাসান। পাঁচের উপর রান রেট ছিল তাদের। নবম ওভার তানজিদ (২৪) আউট হতেই রানের গতি কমতে থাকে। একটা দিক শান্ত ধরে রাখলেও উল্টো দিক থেকে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ।
ব্যর্থ হন মেহেদি হাসান মিরাজ (১৩), তৌহিদ হৃদয় (৭), মুশফিকুর রহিম (২), মাহমুদুল্লাহ (৪)। দলের ধস থামান জাকের। শান্তর সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৪৫ রান যোগ করেন। চাপ থাকায় শান্ত তাড়াহুড়ো করে শট খেলেননি। ধীরেসুস্থে খেলছিলেন। এক সময় মনে হচ্ছিল শতরান পাবেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তবে উইলিয়াম ও’রোর্কের বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন মাইকেল ব্রেসওয়েলের হাতে।
জাকের কিছুটা আগ্রাসী খেলার চেষ্টা করলেও অর্ধশতরান করতে পারেননি। লাথামের থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান। শেষ পর্যন্ত ২৩৬/৯ স্কোরেই থামে বাংলাদেশ। সেই রান ২৩ বল বাকি থাকতেই তুলে নিউ জ়িল্যান্ড।