লর্ডসে বেড়েছে খেলার উত্তাপ। ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ দিকে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়েছেন দু’দলের ক্রিকেটারেরা। এই উত্তাপের নেপথ্যে আইপিএল রয়েছে বলে মনে করেন সুনীল গাওস্কর। তাঁর মতে, ইংল্যান্ডের খুব কম ক্রিকেটার আইপিএলে খেলেন বলে দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে এই ‘শত্রুতা’ দেখা যাচ্ছে।
তৃতীয় দিনের শেষ দিকে যখন দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে বিবাদ হয় তখন ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন গাওস্কর। তিনি বলেন, “ইংল্যান্ড চাইছিল, এক ওভারের বেশি না খেলতে। অন্য দিকে ভারত দু’ওভার বল করতে চাইছিল। ইংল্যান্ডের কাছে খেলোয়াড়ি মানসিকতা দেখতে চাইছিল শুভমনেরা। সেটা ওরা দেখতে পায়নি।”
তার পরেই গাওস্কর জানান, কেন ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে খেলার উত্তাপ এতটা বেশি। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেন, “ইংল্যান্ডের খুব বেশি ক্রিকেটার আইপিএলে খেলে না। জো রুট, বেন স্টোকসেরা আইপিএলে নেই। কিন্তু অন্য দেশের অনেক ক্রিকেটার আইপিএল খেলে। ফলে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে ওদের সম্পর্ক বেশ ভাল। একসঙ্গে হোটেলে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত, অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়। সেটা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হয় না। আমার মনে হয় সেই জন্যই ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ওদের এত শত্রুতা। এটা অবশ্য একেবারেই আমার মত।”
শনিবার ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর ৫ মিনিট খেলার সময় ছিল। ওই সময়ে ২ ওভার হতে পারত ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের। দিনের শেষ দিকে নতুন বলের সুইং খেলা কঠিন। তাই ইংল্যান্ডের ওপেনারেরা সময় নষ্ট করছিলেন। তাঁরা এক ওভারের বেশি না খেলার পরিকল্পনা নিয়েই সম্ভবত ব্যাট করতে নেমেছিলেন। ওভারের তৃতীয় বল করার জন্য জসপ্রীত বুমরাহ দৌড় শুরু করার পর হঠাৎ উইকেট থেকে সরে যান ক্রলি। বোলারের পিছনে গ্যালারিতে কেউ নড়াচড়া করছেন বলে জানান তিনি। অথচ সেখানে কেউ ছিলেন না। বিস্ময় প্রকাশ করেন বুমরাহ-সহ ভারতের অন্য ক্রিকেটারেরা। এই সময় দেখা যায় শুভমন স্লিপ থেকে এগিয়ে এসে ক্রলিকে কিছু বলছেন। তবে আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপে দ্রুত মিটে যায় সমস্যা।
এর পর বুমরাহের পঞ্চম বল করার আগে দুই ওপেনার খানিক ক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। তাঁদের ইচ্ছাকৃত সময় নষ্ট দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। পঞ্চম বল খেলার পর ক্রলি চোট পাওয়ার অভিনয় করেন। বোঝাতে চান বল তাঁর আঙুলে লেগেছে। গ্লাভস খুলে লেগ আম্পায়ারের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। সাজঘরের দিকে ইশারা করে ফিজিয়োকেও ডাকেন ক্রলি। অথচ তিনি ব্যাটের মাঝখান দিয়ে এবং নীচের অংশ দিয়ে ডিফেন্স করেছিলেন। ইংল্যান্ড ওপেনারের অভিনয় দেখে বিদ্রুপ শুরু করেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। ক্রলির দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে শুভমনেরা সবাই মিলে হাততালি দিতে শুরু করেন। যেন বুমরাহের বল খেলার সাহসিকতার জন্য ক্রলিকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন তাঁরা। তা দেখে ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটার উত্তেজিত ভাবে নিজেদের কথা বলতে শুরু করেন। সম্ভবত ভারতীয়দের আরও উত্তেজিত করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য।
এর পর মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি শুভমন। তিনি হঠাৎ ক্রলির দিকে তেড়ে যান। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ডের সাজঘরের দিকে মুখ করে ইমপ্যাক্ট সাব নামানোর সঙ্কেত দেন। ক্রলির সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন বাদানুবাদেও। দু’জনকেই আঙুল উঁচিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এগিয়ে আসেন ডাকেট। তাঁর সঙ্গেও শুভমনের বাদানুবাদ হয়। লোকেশ রাহুল-সহ ভারতের অন্য ক্রিকেটারেরাও এগিয়ে যান। এ সময় ক্ষুব্ধ শুভমনকে গালাগালি (লেখার অযোগ্য) করতেও শোনা গিয়েছে। পরিস্থিতি দেখে আবার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন আম্পায়ারেরা।