একের পর এক ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি চান, পশ্চিমবঙ্গও অনুসরণ করুক উত্তরপ্রদেশকে। যোগী আদিত্যনাথের মডেলে শাস্তি দেওয়া হোক অভিযুক্তদের, শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনই দাবি করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘অভিযুক্তকে জমা নিয়েই খরচ করা উচিত!’’ অর্থাৎ, ধর্ষণের মতো অভিযোগে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের পরই ‘এনকাউন্টার’ করার দরকার বলে মনে করেন বিরোধী দলনেতা।
কসবার আইন কলেজে ধর্ষণকাণ্ড হোক বা দুর্গাপুরের ডাক্তারি পড়ুয়ার গণধর্ষণের ঘটনা— সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্তেরা যাতে পার না পান, তা খেয়াল রাখতে হবে রাজ্য সরকারকে, এমনই বোঝালেন শুভেন্দু। সেই বিষয় নিয়ে বলতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের বানিয়াপুর এলাকায় বছর দুই আগে একটি মেয়ের ধর্ষণ হয়। সেই ঘটনায় অভিযুক্তের ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি।’’ তার পরেই শুভেন্দু ‘যোগী-মডেলে’র প্রসঙ্গ তোলেন। তবে শুধু একা বিরোধী দলনেতা নন, আরজি কর-কাণ্ডের সময় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ‘এনকাউন্টার’-এর কথা বলেছিলেন।
শনিবার শুভেন্দু তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রাজ্যের একের পর এক ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, রাজ্যে ঘটা এই সব ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতিও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘লাগাতার এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে? মুখ্যমন্ত্রী সব বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু এখন কিছু বলেন না।’’ রাজ্যের বন্যাপরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বারবার ডিভিসিকে দায়ী করেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বলেন, ‘‘সব জায়গায় জল জমলে উনি ডিভিসির জল ছাড়াকে দেখতে পান। কিন্তু কসবার ঘটনা থেকে এখনও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেননি মুখ্যমন্ত্রী।’’ বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, ‘‘দুই ছাত্রীর উপর নির্যাতনের ঘটনায় চুপ কেন? কথায় কথায় তিনি সাংবাদিক বৈঠক করেন। এখন নীরব কেন?’’
ডাক্তারি পড়ুয়াকে গণধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে শনিবার সকাল থেকে উত্তাল দুর্গাপুর। অভিযোগ, কয়েক জন যুবক তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করেছেন। পরে তরুণীর সহপাঠীই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। সেই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। তবে সেই ঘটনায় এখনও গ্রেফতার শূন্য। সেই প্রসঙ্গ তোলেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, ‘‘এই দুই ঘটনায় ছেড়ে কথা বলব না।’’ তিনি এ-ও জানান, রাজ্যে ঘটা নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি ‘বৃহত্তর আন্দোলন’-এর পথে হাঁটবে। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বড় সমস্যা নারী নির্যাতন। কসবা ঘটনার পর আমরা রাজ্যে ১৪টি কন্যা সুরক্ষা যাত্রা করেছি।’’ এ বারও নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচির করা হবে বলে জানান তিনি।
শুভেন্দু বার বার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনায় শুধু গ্রেফতারির শেষ কথা হতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘যোগী, (দেবেন্দ্র) ফডণবীস, হিমন্ত (বিশ্বশর্মা), চন্দ্রবাবুর (নায়ডু) মতো সক্রিয় পদক্ষেপ করতে হবে।’’ শুভেন্দুর আরও অভিযোগ, রাজ্যে সুরক্ষিত নন পুলিশের মা-স্ত্রীরাও। নাম না করে অনুব্রত মণ্ডলের কু-কথা প্রসঙ্গ টেনে মমতাকে নিশানা করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে পুলিশের মা-স্ত্রীরা সুরক্ষিত নন। বোলপুরের ঘটনা তার প্রমাণ। ওই ঘটনার পর বীরভূম গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর (অনুব্রত) নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়ে এসেছেন চার জন থেকে নিরাপত্তারক্ষী ২২ জন হয়েছে। জেলা আহ্বায়কও করা হয়েছে।
অতীতে, ‘এনকাউন্টার’ তত্ত্বে জোর দিয়েছিলেন অভিষেকও। আরজি কর পর্বে তিনি বলেছিলেন আইন এনে ধর্ষকদের এনকাউন্টার করার কথা। ডায়মন্ড হারবারে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক চলাকালীন তিনি বলেছিলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের সমাজে থাকার অধিকার নেই। আপনারা কি মনে করেন, যারা এই ঘটনা ঘটাল তার বেঁচে থাকার অধিকার আছে? সাত দিনের মধ্যে আইন করে এনকাউন্টার করে মারা উচিত দোষীকে।’’ শুধু অভিষেক নয়, জয়নগরের ধর্ষণকাণ্ডের পর ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেবও একই সুরে সুর চড়িয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এ রকম নিন্দনীয় ঘটনায় আমাদের সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করা উচিত। এমন কঠোর আইন আনতে হবে… আমি তো বলছি, ‘শুট অ্যাট সাইট’ করে দাও ভাই!’’ এ বার ধর্ষণকাণ্ডে শুভেন্দুর কথায় ‘এনকাউন্টার’ তত্ত্বও শোনা গেল।