ইজ়রায়েলি হামলায় খামেনেইয়ের মৃত্যু হলে বিকল্প কে ইরানে? পাঁচ সম্ভাব্য উত্তরসূরির নাম জল্পনায়

ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে— তিনিই ‘মূল লক্ষ্য’। ইরানের সেই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খামেনেইয়ের মৃত্যু হলে সংঘাতেই ইতি ঘটবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে তেল আভিভ।

ইতিহাস বলছে, ‘সুনির্দিষ্ট নিশানায়’ সফল ভাবে আঘাত হানতে ইজ়রায়েলি সেনার দক্ষতা প্রশ্নাতীত। শেষ পর্যন্ত যদি ‘গোপন আস্তানায়’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮৬ বছরের নেতার মৃত্যু হয় তবে তাঁর শূন্যস্থান কী ভাবে তেহরান পূরণ করবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। আর এ ক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে আসছে পাঁচ বিকল্প।

মোজতবা খামেনেই

আয়াতোল্লার উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে পয়লা নাম তাঁর দ্বিতীয় পুত্র মোজতবার। ৫৬ বছরের এই নেতার হাতেই অঘোষিত ভাবে রয়েছে ইরান ফৌজের এলিট ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড’ বাহিনীর দায়িত্ব। পাশাপাশি, বিভিন্ন শিয়া মুসলিম সংগঠনের শীর্ষ পদেও রয়েছেন তিনি। সরকার এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে আয়াতোল্লার পরেই তাঁর প্রভাব।

আলিরেজা আরাফি

ইরানের জনসমাজে আরাফি পরিচিতি ‘আয়াতোল্লার ডান হাত’ হিসেবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েকশিয়ানের সরকারকে পরামর্শ (আদতে ‘নির্দেশ’) দানকারী ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’ এবং ‘উপদেষ্টা পরিষদ’-এর ডেপুটি চেয়ারম্যান রয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ইরানের ‘ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রাজধানী’ হিসাবে পরিচিত কোম শহরের জ়ামকারান মসজিদের পরিচালনার দায়িত্বও রয়েছে তাঁর কাঁধে। শুক্রবার জুম্মার নমাজের ওই আরাফির নির্দেশেই জ়ামকরন মসজিদের চূড়ায় লাল পতাকা উড়িয়ে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বার্তা দেওয়া হয়েছিল।

আলি আসগর হেজ়াজি

আয়াতোল্লার দফতরে রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক সমস্ত পদক্ষেপ পর্যালোচনার দায়িত্ব হেজ়াজির কাঁধে। তিনি ইরানের গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থাগুলির তত্ত্বাবধানও করে আসছেন দীর্ঘ দিন ধরে। প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। হামাস, হিজ়বুল্লা, হুথির মতো সহযোগী সশস্ত্র সংগঠন নিয়ে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (অ্যাক্সিস অফ রেজ়িস্ট্যান্স) গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হেজ়াজিই মূল কারিগর।

মহম্মদ গোলপায়েগানি

আয়াতোল্লা খামেনেইয়ের দফতরের ‘চিফ অফ স্টাফ’ হিসেবে ইরান সরকারের যাবতীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ পর্যালোচনা করেন তিনি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়ার আগে আয়াতোল্লা সব সময়ই গোলপায়েগানির সঙ্গে পরামর্শ করেন। ইরান সরকারের সঙ্গে আয়াতোল্লার দফতরের নিরন্তর সমন্বয়ের কাজটিও করেন এই নেতা।

যৌথ নেতৃত্ব

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ইরানের ৮৮ জন ধর্মীয় নেতাকে নিয়ে গঠিত জাতীয় পরিষদ দায়িত্ব নিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ইরানের সংবিধানে সে বিকল্প রয়েছে। বস্তুত, আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলার উদ্দেশ্যেই প্রতি আট বছর অন্তর ওই ৮৮ সদস্যের জাতীয় পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। এ ছাড়া আয়াতোল্লা ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল গোলাম হোসেন মোহসনি, বিদেশমন্ত্রী আলি আকবর ভেলায়েতি এবং ইরান পার্লামেন্টের মুখপাত্র আলি লারজানির নামও উত্তরসূরি-জল্পনায় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.