হাথরস, কাঠুয়া, উন্নাওতে যাঁরা ধর্ষকদের মালা পরিয়েছেন, তাঁরাই এ রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য আরজি কর আন্দোলনকে ব্যবহার করতে চাইছেন। এমনটাই অভিযোগ করলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপিকেও একহাত নিয়েছেন তাঁরা। যদিও সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের নাম তাঁরা নেননি।
বুধবার আরজি কর থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টরস্ ফোরামের তরফে ওই বৈঠকে ছিলেন দেবাশিস হালদার, অনিকেত মাহাতোর মতো পরিচিত মুখেরা। দেবাশিসের কথায়, ‘‘রাজ্যের ক্ষমতা দখলের ক্ষুদ্র স্বার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গোড়া থেকেই আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে চাইছে। আমরা বার বার স্পষ্ট করে জানিয়েছি, হাথরস-কাঠুয়া-উন্নাওতে যাঁরা ধর্ষকদের মালা পরিয়েছেন, তাঁদের ক্ষমতা দখলের চক্করে আমাদের আন্দোলনকে ব্যবহার করতে দেব না। জনগণ দেবে না।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের নাম করে বিশেষ ওই রাজনৈতিক দল ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে বলেও অভিযোগ করেন দেবাশিস, অনিকেতরা। দেবাশিস বলেন, ‘‘এই দলেরই কয়েক জন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন এবং মহালয়ার দিন নির্যাতিতার জন্য জুনিয়র ডাক্তারেরা তর্পণ করবেন বলে ভুয়ো খবর ছড়ান। ওই কর্মসূচির সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের কোনও সম্পর্ক নেই। বিভাজনকামী যে কোনও রাজনীতিকে প্রথম থেকেই প্রত্যাখ্যান করেছে এই আন্দোলন। আগামীতেও তা-ই করবে।’’
রাজ্য সরকারকেও বার্তা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। জানিয়েছেন, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে যে বৈঠকের পর তাঁরা কর্মবিরতি আংশিক তুলে নিয়েছেন, সেই বৈঠকে তাঁরা কিছু লিখিত নির্দেশিকা আদায় করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, দু’একটি বিচ্ছিন্ন উদাহরণ ছাড়া ওই নির্দেশিকা প্রতি হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজে প্রয়োগ করা হয়নি। দেবাশিস বলেন, ‘‘আমরা রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, সরকার যদি রোগী পরিষেবা এবং ডাক্তারদের সুরক্ষার বিষয়ে এই ধরনের গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে চলে, আমরা আন্দোলনকে তীব্রতর করতে বাধ্য হব।’’ পঞ্চম দাবির বাস্তবায়নের জন্যেও সরকারের তরফে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন তাঁরা। এই বিষয়গুলি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসতে চান বলেও জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, কর্মবিরতি উঠে যাওয়ার পর অনেকে প্রতিহিংসামূলক কার্যকলাপের শিকার হচ্ছেন। তাঁদের মন্তব্য, ‘‘আমাদের ডাকে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে যাঁরা ‘রাতদখল’ বা অন্য কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এই প্রতিহিংসামূলক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। নয়তো আন্দোলন আরও তীব্র হবে।’
উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে গত ৯ অগস্ট থেকে কর্মবিরতি পালন করছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ৪২ দিন পর সেই কর্মবিরতি আংশিক তুলে নেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিষেবায় তাঁরা যোগ দিয়েছেন। উঠেছে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে ধর্নাও। সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় তাঁদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তাঁরা। তবে সরকারের কাছ থেকে আদায় করা প্রতিশ্রুতি পালন না হলে আবার যে বৃহত্তর আন্দোলনে পথে নামবেন, সে কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।