স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে মেরে বস্তায় ভরে দেহ লোপাটের চেষ্টা, গ্রেপ্তার স্বামী ও শাশুড়ি, চাঞ্চল্য বীরভূমের সোঁজ গ্রামে

 পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিল স্ত্রী। প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। এনিয়ে থানায় মৌখিকভাবে আগাম জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ফলে রাগের মাথায় স্বামীর লোহার হাতুড়ির এক ঘায়ে মৃত্যু হল স্ত্রীর। পরে স্ত্রীকে বস্তাবন্দি করে পুকুরের ধারে ঝোপের আড়ালে রেখে এসেও শেষ রক্ষা হল না। পুলিশ স্বামী এবং শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের মল্লারপুর থানার সোঁজ গ্রামে।

মৃত গৃহবধূর নাম প্রিয়া মণ্ডল। বয়স আনুমানিক ২৩ বছর। বাপের বাড়ি মেদিনীপুর। পেশায় ইলেকট্রিক ওয়ারিং মিস্ত্রি সুফল বছর পাঁচেক আগে মেদিনীপুরে কাজে গিয়ে ভালোবেসে প্রিয়াকে বিয়ে করে। তাদের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। বুধবার বিকেলে গৃহবধূকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন সুফল। বাড়ির মধ্যেই রক্তক্ষরণ হয়ে গৃহবধূর মৃত্যু হয়। প্রমাণ লোপাট করতে জল দিয়ে বাড়ির রক্ত ধুয়ে ফেলা হয়। এরপর মা ও ছেলেতে মিলে গৃহবধূকে বস্তাবন্দি করে বাড়ি সংলগ্ন পুকুরের ধারে ঝোপের আড়ালে রেখে আসে। কিন্তু বাচ্চা মেয়ের কান্না শুনে প্রতিবেশীরা বাড়িতে ছুটে আসে। এমনকি সুফলও বিভিন্ন জনকে খুনের কথা কবুল করেছিল। তারপরেই উদ্ধার হয় বস্তাবন্দি মৃতদেহ।

প্রতিবেশী অরূপ ভুঁইমালী বলেন, “আমরা ফুটবল খেলছিলাম। তখন সুফল ছুটে গিয়ে আমাদের বলে বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল। আমি বউকে হাতুড়ি দিয়ে মেরে দিয়েছি। তারপর আমরা গিয়ে বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দিই”।

পুলিশ খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে গৃহবধূর শাশুড়ি শোভারাণী মণ্ডলকে গ্রেফতার করে। গভীর রাতে পুলিশ সুফলকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার রামপুরহাট আদালতে দু’জনকে তোলা হলে বিচারক শাশুড়িকে ১৪ দিনের জেল হেফাজত এবং সুফলকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

আদালতে ঢোকার মুখে খুনের কথা স্বীকার করে নেন সুফল। তিনি বলেন, “স্ত্রী অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছিল। সব সময় ফোন করত। ফোনে শরীর দেখাতো। স্ত্রীকে বারণ করেছিলাম, কিন্তু শোনেনি। থানার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। পুলিশ বলেছিল তাদের কিছু করার নেই। বুধবার ফের ফোনে ওই ছেলেটার সঙ্গে কথা বলছিল। আমি বাধা দিতে গেলে হাতুড়ি দিয়ে আমার হেলমেট ভেঙ্গে দেয়। আমি রাগের মাথায় হাতুড়ি কেড়ে নিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করি। ঘটনার সময় মা আমার মেয়েকে নিয়ে বাইরে ছিল। মা যখন বাড়িতে আসে তখন আমি বস্তায় ঢোকাচ্ছিলাম। একা বস্তায় ঢোকাতে না পেরে মায়ের সাহায্য নিয়েছিলাম। ঠিক করেছিলাম সন্ধ্যার দিকে থানায় বস্তা নিয়ে যাব”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.