চিনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে কী ভাবে ২৩ মিনিটে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’? বর্ণনা দিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক

মাত্র ২৩ মিনিট। নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম না করেই ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সফল করেছে। বুধবার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানাল, কী ভাবে এসেছে সেই সাফল্য। পাকিস্তানের চিনা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কোথাও পাশ কাটিয়ে কোথাও আবার অকেজো করে দিয়ে হামলা চালিয়েছে ভারত। ধ্বংস করা হয়েছে একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি। সম্পূর্ণ অভিযানে ভারতের কোনও সম্পত্তির কোনও ক্ষতি হয়নি।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘অপারেশন সিঁদুরে পেচোরা, ওএসএ-একে এবং এলএলএডি বন্দুকের মতো যুদ্ধ-প্রমাণিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ব্যাট্‌ল প্রোভেন এডি) ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবহৃত হয়েছে ‘আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র। ‘আকাশ’ একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, যা সংবেদনশীল এলাকাগুলিকে আকাশপথে হামলার হাত থেকে রক্ষা করে। ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থলবাহিনী, নৌসেনা এবং বায়ুসেনার সম্মিলিত সম্পদের মাধ্যমে গঠিত, যা দেশের আকাশে অভেদ্য দেওয়াল তৈরি করে দিয়েছিল। পাকিস্তান এর ফলে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।’’

ভারতের হামলার নিশানায় ছিল পাকিস্তানের নূর খান এবং রহিমইয়ার খান বায়ুসেনা ঘাঁটি। এই ঘাঁটিগুলিতে হামলার জন্য ‘লয়টারিং মিউনিশনস্‌’ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘লয়টারিং মিউনিশনস্‌’ এক ধরনের আত্মঘাতী ড্রোন, যা নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছে আকাশে বেশ কিছু ক্ষণ ঘুরে বেড়ায় এবং হামলার উপযুক্ত জায়গা চিহ্নিত করে। তার পর এই ড্রোন থেকে হামলা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘কোনও হামলাতেই ভারতের সম্পত্তি ধ্বংস হয়নি। আমাদের প্রযুক্তি, পরিকল্পনা এবং নজরদারির কার্যকারিতা এর থেকেই প্রমাণিত হয়। ভারতের বায়ুসেনা চিনের দেওয়া পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা পাশ কাটিয়েছে এবং অকেজো করে দিয়েছে। সমগ্র মিশন ২৩ মিনিটে সম্পন্ন হয়েছে। ভারতের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ এর থেকে প্রমাণিত হয়।’’

ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় পাকিস্তানের কী কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা-ও প্রমাণ-সহ তুলে ধরেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। পাকিস্তানের হামলার চেষ্টার পর ভারতের মাটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চিনে তৈরি পিএল-১৫ মিসাইলের টুকরো, তুরস্কের ইউএভি ‘ইহা’ এবং একাধিক রকেট, কোয়াডকপ্টার ও ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ। এগুলি পাকিস্তান থেকে ছোড়া হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর পাকিস্তানের দিক থেকে প্রত্যাঘাত আসবে, আগেই আন্দাজ করেছিল ভারতীয় সেনা। সেই অনুযায়ী বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছিল। ভারতের সীমান্তে তৈরি ছিল ‘কাউন্টার আনম্যান্‌ড এরিয়াল সিস্টেম’, ‘শোল্ডার-ফায়ার্‌ড অস্ত্র, লিগ্যাসি এয়ার ডিফেন্স অস্ত্র এবং মডার্ন এয়ার ডিফেন্স অস্ত্র। বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সমস্যায় পড়ে পাকিস্তান।

‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ, উল্লেখ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। বলা হয়েছে, ইসরোর ১০টি কৃত্রিম উপগ্রহ অনবরত কাজ করছে। তাদের সাহায্য ছাড়া সমুদ্র বা ভারতের বিস্তীর্ণ উত্তর ভাগে নজরদারি সম্ভব ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.