মাথায় আঘাত করে শিরা কেটে বাবা-মা ও বোনকে খুন! হুগলির সেই শিক্ষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল হাই কোর্ট

মা, বাবা এবং বোনকে খুনের ঘটনায় হুগলির অঙ্কের গৃহশিক্ষক প্রমথেশ ঘোষালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল কলকাতা হাই কোর্ট। গত বছর হুগলির অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা আদালত অভিযুক্তকে মৃত্যুর সাজা দেয়। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রমথেশ কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডের সাজা রদ করে দোষীকে আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনা। হুগলির ধনেখালির দশঘরা গ্রামে রায় বাড়ির ঘরের মেঝে থেকে উদ্ধার হয় প্রমথেশের বাবা-মার রক্তাক্ত দেহ। দরজার কাছে পড়েছিলেন প্রমথেশ। পাশের ঘর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর বোনের দেহ। বাবা-মা, বোনকে মাথায় ভারী বস্তুর আঘাতে খুন করেছিলেন তিনি। পরে তাঁদের হাতের শিরা কেটেছিলেন। শেষে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন প্রমথেশ। যদিও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

প্রমথেশ অঙ্কের গৃহশিক্ষক ছিলেন। দশঘরা এলাকায় নামডাক ছিল তাঁর। ভাল রোজগারও করতেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, প্রমথেশের বাবা অসীম ঘোষাল আগে তারকেশ্বরে থাকতেন। শিল্পী ছিলেন। দশঘড়ায় সাইনবোর্ড লেখার একটি দোকান ছিল তাঁর। বেহিসাবি জীবনযাপন নিয়ে বাড়িতে বাবার সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় দশঘড়ায় রায়দের জমিদারবাড়িতে ভাড়া চলে আসেন তিনি। সেখানে ৪০ বছর ধরে ছিল তাঁর পরিবার। প্রমথেশের জন্মও সেখানে। দশঘরা হাই স্কুল থেকে পাশ করে বিজ্ঞানে স্নাতক। তার পর কলকাতায় পড়াশোনা। কিন্তু চাকরি পাননি। সেই থেকে টিউশন দিতেন তিনি। আত্মীয় ও বন্ধুদের দাবি, সম্ভবত মদের নেশা থেকে কঠিন লিভারের অসুখ বাঁধিয়েছিলেন প্রমথেশ। কলকাতার একটি হাসপাতালে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। তার পরেও সুস্থ না-হওয়ায় চিকিৎসার জন্য চেন্নাইতে গিয়েছিলেন তিনি।

তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওষুধের জন্য মাস গেলে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হত প্রমথেশের। ঘটনার বছর দশেক আগে পূর্ব বর্ধমানের জৌ গ্রামে তাঁর বোন পল্লবী ঘোষালের বিয়ে হয়েছিল। তিনি অসুস্থ ছিলেন। সে কারণে তাঁকে অর্থসাহায্য করতে হত প্রমথেশকে। করোনা পরিস্থিতিতে উপার্জন কমে গিয়েছিল প্রমথেশের। বোনকে অর্থ সাহায্য, বাবার মদের টাকা জোগাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন তিনি। সেই নিয়ে সংসারে অশান্তি চলত।

প্রমথেশ নিজে পুলিশকে জানান, তাঁর পক্ষে বাবা-মা ও বোনের বোঝা আর টানা সম্ভব হচ্ছিল না। তাঁর কিছু হয়ে গেলে বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখবে কে, সেই নিয়ে উদ্বেগ ছিল। তাই সব শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দোষীর পক্ষে হাই কোর্টে সওয়াল করেন আইনজীবী সৌমজিৎ দাস মহাপাত্র। নিম্ন আদালতের রায় খারিজ করে হাই কোর্ট প্রমথেশকে যাবজ্জীবন দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.