গোকুল চন্দ্র মিত্রর বাড়ি ও রাধা মদনমোহন জিউ ঠাকুর

উত্তর কলকাতায়, বিশেষত বাগবাজার-কুমোরটুলি এলাকায় যেন পায়ে পায়ে ইতিহাস। নানা সময়ে, সে সবের নানা জায়গায় ঢুঁ মেরেছি। ধারাবাহিক লিখেছি ফেসবুকে। সেগুলো প্রকাশিত হয়েছে অধুনালুপ্ত হয়েছে একটি বাংলা দৈনিকে। বড় অপরাধ, সেগুলো সংরক্ষণ করিনি। হারিয়ে গিয়েছে অসংখ্য লেখার স্তূপে।

এখন বাইরে খুব কম বার হই। তাও হাতছানি দিয়ে ডাকে ঐতিহ্যগুলো। প্রতিটির সঙ্গেই জড়িয়ে কত আপাত-অজানা বা ভুলে যেতে বসা কাহিনী। গেলাম ৫৩০ রবীন্দ্র সরনীতে গোকুল চন্দ্র মিত্রর বাড়িতে। এই পরিবারের অতীতের বৈভব আর ঐতিহ্যের কথা কলকাতা-গবেষকরা প্রায় সকলেই জানেন। শেষ বার কয়েক বছর আগে ঐতিহ্যপ্রেমী অনিরুদ্ধ বসুকে (সিইএসসি-র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট) নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। দুপুর বলে সেবার মূল মন্দির ছিল বন্ধ। আজ সেটা খোলা পেলাম।

মূল প্রাসাদ বহু বছর ধরেই তালাবন্ধ। পাকা থামওয়ালা চাঁদনী। এটি নাকি এশিয়ার সর্ববৃহৎ চাঁদনী। জানা যায়, একসময়,এখানে রোজ তিনশো কাঙালী ভোজনের বন্দোবস্ত থাকত। চত্বরের ফাঁকা জায়গা, রাসমন্দিরের
আশপাশ বহু যুগ আগেই দখল হয়ে আছে।
বংশপরম্পরায় বাস করছেন ওখানে। প্রচুর প্রতিমাশিল্পীর তথাকথিত ‘কারখানা’। বেশ কয়েকটিতে কাজ হচ্ছে। ছবি তোলা নিষিদ্ধ বলে নির্দেশিকা লাগানো আছে। ছবিশিকারিরা কি আর সেটা মানেন?

প্রতি বছর এখনও কালীপুজোর পর ওই প্রাসাদের মন্দিরে ঘটা করে অন্নপূর্ণা পুজো হয়। অন্দরের প্রশস্ত, মূল্যবান পাথরে আচ্ছাদিত সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে ঢুকলাম মন্দিরে। সুদৃশ্য সিংহাসনে অধিষ্ঠিত, ফুলের সাজে সুসজ্জিত মদনমোহন। সাথে রাধিকা। রয়েছেন গোকুল কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়াও। নিচে সিঁড়ির মুখে দোলনায় বসে রাধাকৃষ্ণ।

পাশে নিস্তব্ধ বিশাল প্রসাদ। যে কেউ তাকিয়ে থাকবেন চিত্রার্পিতের মতো। আমি তাতেই ক্ষান্ত হলাম না। নিজেরও একটা ছবি তুলিয়ে রাখলাম। সঙ্গে অবশ্যই বাড়িটির নানা অংশের ছবি। এই প্রাসাদ এবং মিত্র পরিবার সম্পর্কে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। সত্যিই যেন রূপকথা। তবে আজ আর সেগুলোর পুনরুক্তিতে গেলাম না। —অশোক সেনগুপ্ত। ২-৩-২৫।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.