শিল্পে নগ্ন নারী দেহের প্রয়োগ সৌন্দর্য্যের প্রতীক, নাকি অশ্লীলতার নামান্তর, এই বিষয়ে বহু যুগ ধরে নানা মুনি নানা মত প্রকাশ করে এসেছেন। কিন্তু সম্প্রতি ২৮ থেকে ৩০ মার্চ কলকাতার আই সি সি আর- এ বেঙ্গল ক্রিয়েটিভ ক্লাবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে চলা চিত্র প্রদর্শনী “শেডস অব ন্যুড” অনুষ্ঠানে হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীকে প্রধান অতিথি ও মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে সম্মানিত করার ফলে এই চিরাচরিত বিতর্ক আরেকবার আলোচনার কেন্দ্রে বিন্দুতে।

কেউ কেউ বলছেন, এ যেন উলটপুরাণ, কারণ ভারতের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি বরাবরই হিন্দুত্ব, জাতীয়তাবাদ, সাবেকি সংস্কৃতি এবং সনাতনী আদর্শের প্রতি অত্যন্ত রক্ষণশীল। দেশের বিভিন্ন স্থানে যেখানেই সনাতনী জাতীয়তাবাদী আদর্শ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন সেখানেই হিন্দু মহাসভার সমর্থকরা তীব্র প্রতিবাদী আন্দোলনে নেমে পড়েন। এহেন হিন্দু মহাসভার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও মুখ্য উপদেষ্টা হতে রাজি হওয়ায় হিন্দু মহাসভার নীতিগত অবস্থানের কি কোন পরিবর্তন ঘটছে? এই প্রশ্নের উত্তরে দিল্লিতে মন্দির মার্গের ন্যাশনাল অফিস “হিন্দু মহাসভা ভবন” থেকে
চন্দ্রচূড়বাবু বলেন, বেঙ্গল ক্রিয়েটিভ ক্লাবের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আমরা মূল উদ্যোক্তা শিল্পী সুরথ চক্রবর্তী এবং মডেল শর্মিষ্ঠা রায় চৌধুরীকে হিন্দু মহাসভার সাম্মানিক সদস্যতা প্রদান করেছি। যে দেশের শিল্প, স্থাপত্য, ভাস্কর্য এবং আধ্যাত্মিকতার সাথে অজন্তা, ইলোরা, খাজুরাহ বা কোনারকের সূর্য মন্দিরের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য সম্পৃক্ত সেই দেশে বেঙ্গল ক্রিয়েটিভ ক্লাবের এই উদ্যোগ বিশেষ অবাক হওয়ার মত কিছু নয়। নারীদেহ সৌন্দর্যের প্রতীক, তাই উদার মানসিকতার যে শিল্পী তার শিল্পের মাধ্যমে নগ্ন নারীদেহকে দেবী রূপে ফুটিয়ে তুলেছেন, বুঝতে হবে সেই শিল্পী প্রতিটি নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে জানেন। আর যে সমাজ নারীদেহকে লজ্জার আসবাব মনে করে, তারা আসলে নারীকে হাতের মুঠোয় রাখতে বা পদদলিত করতে চায়, কারণ তারা নারীর ক্ষমতায়ণকে ভয় পায়।
মুঘল যুগে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমাজে নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল এবং সত্যি বলতে পর্দাপ্রথা কখনোই ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির অংশ নয়। আগামী দিনে খুব তাড়াতাড়ি আমরা আমাদের মুখপত্র “স্বস্তিক নিউজ” চ্যানেলের মাধ্যমে এই বিষয়ে একটি অভিনব বিতর্ক সভার আয়োজন করতে চলেছি, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে বর্তমান সমাজ শিল্পে নগ্ন নারীদেহের উপস্থিতিকে ঠিক কি চোখে তারা দেখে। শিল্পীর স্বাধীনতাকে সম্মান দিয়ে আমরা কারো উপর কোনো সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি নই। আমরা চাই, বর্তমান সমাজের প্রতিনিধিরা নিজেদের বাক স্বাধীনতার মাধ্যমে যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনার দ্বারা ঠিক করুক আগামী দিনে ভারতের সমাজ ও সংস্কৃতি কোন পথের দিশারী হবে।