দোল এবং হোলি বসন্তের উৎসব, প্রকৃতি-কেন্দ্রিক আনন্দ-পারম্পর্য। এই দিনগুলিতে প্রকৃতির মধ্যেই থাকতে চাই, প্রাণে এবং মনে প্রকৃতির আনন্দোচ্ছ্বাস অনুভব করতে চাই। কৃত্রিম, ক্ষতিকর রঙ ব্যবহার করে উৎসবকে কলুষিত করতে চাই না। প্রাকৃতিক ভেষজ রঙ ব্যবহার করে নিরাপদে দোল ও হোলি খেলতে চাই। তাহলে বাড়িতে নিজেই তৈরি করে নিতে পারি টাটকা জলরং আর আবীর। বাচ্চাদের হাতে সেটাই তুলে দিতে পারি, আর উৎসবের পুরো আনন্দ উপভোগ করতে পারি। শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকা প্রকৃতির এক অনির্বচনীয় আনন্দের সাগর। প্রকৃতি-রূপ নারী চেতনার রঙে পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের মন রাঙানোর প্রকাশ হচ্ছে বসন্তী পুষ্পরেণুতে সেজে ওঠা প্রকৃতি, তার কিশলয়, তার নতুন কুঁড়ি। প্রকৃতির রঙ কখন যেন আমাদের মনও রাঙিয়ে দেয়, আমরা হয়ে যাই রাধাকৃষ্ণের ঐশী প্রকাশ। মানব মনে ঈশ্বর এসে ধরা দেন রঙের দ্যোতনায়। তাই প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে, প্রকৃতির আবীর গুলাল নিয়েই খেলুন বসন্ত-দোল। দুলিয়ে দিন আপনার মন, কৃত্রিম রঙের হোলিকাসুরকে পরাজিত করুন।
কীভাবে তৈরি করবেন প্রাকৃতিক ভেষজ রঙ?
১. লাল-মাটির মাঠে মাঠে এখন পলাশ ফুটে লালে লাল; পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূমের জঙ্গলে জঙ্গলে পলাশ ফুলে বিছিয়ে আছে মাটি। তা কুড়িয়ে সংগ্রহ করে নিন, শুকনো অথবা সতেজ। দক্ষিণবঙ্গের নানা স্থানে পথিপার্শ্বস্থ পলাশে ফুলেও আগুন জ্বলছে! পলাশ পাপড়িগুলিকে বৃন্ত থেকে আলাদা করতে হবে। তারপর সেই পাপড়ি পরিমাণ মতো গরম জলে সেদ্ধ করা হবে। সেদ্ধ হলে পাপড়ি থেকে সম্পূর্ণ পলাশ রঙ বেরিয়ে আসবে। তখন ওই রঙিন জলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে নিলেই পলাশ ফুল থেকে ভেষজ আবির তৈরি হয়ে যাবে। প্যাকেটে ভরার আগে ওই আবিরে রং ধরে রাখার জন্য কিছু পরিমাণ হলুদের গুঁড়ো মেশানো যায়। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গাঁয়ের মানুষ তা তৈরি করে বিপণন করতে পারেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে। পলাশ ফুল কুড়িয়ে আপনি নিজেও বাড়ির জন্য রঙ তৈরি করে নিতে পারেন। তরল রঙ ধাতব পিচকারিতে ভরে বা অন্য উপায়ে মাখিয়ে দিন প্রিয় মানুষকে। সে রঙ কখন লাগবে এসে মনে, জানা নেই!
২. একইভাবে পুজো হয়ে গেলে নীলকন্ঠ অপরাজিতার ফুল-মালা থেকে পাপড়ি আলাদা করে নিন। সরাসরি ফুলে, কিনেও নিতে পারেন বাজার থেকে। গরম জলে নীল অপরাজিতা সেদ্ধ করলে নীল রঙ বের হয়ে আসে।
৩. বাসন্তী ও কমলা রঙের আলাদা আলাদা গাঁদা ফুলের জাত রয়েছে, কিনে আনুন। বাড়ির প্রয়োজনে পুজো হয়ে যাওয়া ফুল ব্যবহার করতে পারেন। পাপড়ি গরম জলে সেদ্ধ করে তাতে ট্যালকম পাউডার মিশিয়ে, ভালোভাবে গুলিয়ে, রোদে শুকিয়ে যথাক্রমে হলুদ ও কমলা আবীর তৈরি করুন।
৪. কাঁচা হলুদ সিদ্ধ করে অথবা গুড়ো হলুদ গরম জলে মিশিয়ে প্রাকৃতিক রঙ তৈরি করা যায়। রঙে সুগন্ধি আনতে তাতে তুলসীপাতা, তেজপাতা সেদ্ধ জল মেশান। রঙ তৈরি হলে আলাদা করে সামান্য কর্পূর মিশিয়ে দিন। অন্য ক্ষেত্রেও নানান প্রজাতির তুলসী, তেজপাতা, কর্পূর ব্যবহার করলে সুগন্ধ পাওয়া যাবে।
৫. সবুজ রঙ তৈরি করতে পূর্ণ বিকশিত বেলপাতা শুকিয়ে (ঘরোয়া শিল্প করতে ডেসিকেটরে বেলপাতা শুকাতে হবে) তা গুঁড়ো করে নিন, তা সূক্ষ্ম চালুনিতে ছেঁকে মিশিয়ে দিন ট্যালকম পাউডারে, সবুজ আবীর রেডি!
ভেষজ রঙ/আবীর নিজেই তৈরি করুন, দোল/হোলি খেলুন নিরাপদে।
কল্যাণ চক্রবর্তী।