সম্পর্কে তিনি নিহত মাওবাদী নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজির ভ্রাতৃবধূ। তাঁর স্বামী মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি ওরফে বিবেক ওরফে সোনু নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। বুধবার মহারাষ্ট্রের গঢ়ছিরৌলিতে বিদর্ভ অঞ্চলের যে ১১ জন মাওবাদী নেতা-নেত্রী সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন, সেই তালিকার প্রথম নাম তাঁরই— পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি)-র কমান্ডার তথা দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটির নেত্রী বিমলা চন্দ সিদাম ওরফে তারাক্কা।
শুধু মহারাষ্ট্র নয়, দেশ জুড়ে মাওবাদী বিরোধী অভিযানের প্রেক্ষিতেও বিমলার আত্মসমর্পণ সাম্প্রতিক কালের ‘সবচেয়ে বড় সাফল্য’ বলে মনে করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্র পুলিশ জানিয়েছে, মাওবাদী সশস্ত্র বাহিনী পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি)-র কমান্ডার তথা দণ্ডকারণ্য জোনাল কমিটির নেত্রী বিমলা গত ৩৮ বছর ধরে সশস্ত্র নকশালপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৮৩ সিপিআইএমএল (পিডব্লিউজি)-র হাত ধরে ‘সশস্ত্র বিপ্লবে’ যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সংগঠনের অন্দরে দ্রুত কিষেণজির আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। দেড় দশক আগে, ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর এ রাজ্যের ঝাড়গ্রামের বুড়িশোলের জঙ্গলে যৌথবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল কিষেণজির। কিন্তু তত দিনে বিমলার স্বামী বেণুগোপালও সংগঠনের প্রথম সারির নেতা হয়ে গিয়েছেন।
মহারাষ্ট্র পুলিশের দাবি, গঢ়ছিরৌলি-সহ বিদর্ভের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ছত্তীসগঢ়েও একাধিক নাশকতায় জড়িত বিমলা-সহ আত্মসমর্পণকারী ১১ মাওবাদী নেতা-নেত্রী। বিমলার বিরুদ্ধে গঢ়ছিরৌলিতে একটি পুলিশ ফাঁড়িতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১৮ জনকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর সঙ্গেই বুধবার ফডণবীসের হাত থেকে ভারতীয় সংবিধান হাতে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সিপিআই মাওবাদীর গঢ়ছিরৌলি ডিভিশনের নাংশু তুমরেতি ওরফে গিরিধর এবং তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা উসেন্দি ওরফে ললিতা। ১৭০টি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত গিরিধরের মাথার দাম ছিল ২৫ লক্ষ টাকা। আত্মসমর্পণকারী ১১ জন মাওবাদীর মোট মাথার দাম এক কোটি তিন লক্ষ!
এই নিয়ে গত তিন সপ্তাহে তিন বার বিদর্ভ এলাকায় মাওবাদী আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটল। গত ২৭ ডিসেম্বর মলাজখণ্ড দলাম এবং ৯ নম্বর পামেড় প্লাটুনের কমান্ডার দেব ওরফে অর্জুন ওরফে রাকেশ সুমদো মুদাম গোন্ডিয়া জেলা পুলিশের সুপারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তাঁর মাথায় দাম ছিল সাত লক্ষ টাকা। ডিসেম্বরেই গঢ়ছিরৌলি জেলায় দুই মাওবাদী কমান্ডার রামাসু পয়াম ওরফে নরসিংহ এবং রমেশ কুঞ্জম ওরফে গোবিন্দ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। রামাসুর মাথায় দাম ছিল ছ’লক্ষ টাকা। রমেশের দু’লক্ষ। আত্মসমর্পণ কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীস বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে মাওবাদীদের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র শীঘ্রই ‘মাওবাদী মুক্ত’ হবে।’’ উত্তর গঢ়ছিরৌলি ইতিমধ্যেই ‘মাওবাদী মুক্ত’ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।