ঘুমপাড়ানি ফুটবল খেলে ড্র হ্যারি কেনদের, শেষ ষোলোয় এরিকসেনের ডেনমার্ক, স্লোভেনিয়াও

গোল খাব না। মঙ্গলবার কোলন স্টেডিয়ামে এই মানসিকতা নিয়েই নেমেছিল হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড। ফল যা হওয়ার তাই হল। গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল স্লোভেনিয়াকেও হারাতে পারল না ইংল্যান্ড। গোলশূন্য ড্র হল সেই ম্যাচ। গ্রুপের অন্য ম্যাচে ডেনমার্ক-সার্বিয়াও গোলশূন্য ড্র করেছে। ফলে ইংল্যান্ড গ্রুপে শীর্ষ স্থানে শেষ করল। তিনটি ম্যাচই ড্র করে দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ করল ডেনমার্ক। একই সংখ্যক পয়েন্ট পরের রাউন্ডে চলে গিয়েছে স্লোভেনিয়াও।

মাঝমাঠ আরও বেশি করে দখল নেওয়ার লক্ষ্যে ট্রেন্ট আলেকজ়ান্ডার-আর্নল্ডকে বাদ দিয়ে কোনর গ্যালাঘারকে প্রথম একাদশে রেখেছিলেন ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। কিন্তু ট্রেন্ট যে মানের ফুটবলার, তার ধারেকাছে এখনও পৌঁছতে পারেননি গ্যালাঘার। ফলে মাঝমাঠে যে কাজটা করতে দেওয়া হয়েছিল সেটা পারেননি। উল্টে বিপক্ষের ফুটবলারের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করলেন বেশ কয়েক বার। মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হচ্ছিল ডেক্লান রাইসকেই।

শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের খেলার মধ্যে গোল না খাওয়ার একটা মানসিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। ম্যাচের আগে সাউথগেট বলেছিলেন, তাঁরা ‘প্রেসিং’ ফুটবল খেলবেন। অর্থাৎ আক্রমণে আক্রমণে নাভিশ্বাস তুলে দেবেন প্রতিপক্ষের। কিন্তু সেই খেলা তাঁরা খেলতে পারলেন না। উল্টে স্লোভেনিয়াকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল। ম্যাচের আগে তারা জানত এই ম্যাচ থেকে পয়েন্ট পেলে তাদেরও পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাদের বেশ কিছু আক্রমণে গোল হতেই পারত।

প্রথমার্ধে ইংল্যান্ড এমন একটিও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি যেটা দেখে তাদের বাহবা দেওয়া যায়। ফিল ফডেন বার বার চেষ্টা করছিলেন মাঝের জায়গাটা দিয়ে গোলে ঢোকার। কিন্তু স্লোভেনিয়ার ফুটবলারেরা সেই ফাঁকা জায়গাটুকুও দিচ্ছিলেন না। এক বারই তিনি ভেতরে ঢুকে বক্সের মধ্যে একটা পাস দিয়েছিলেন, যা জালে জড়িয়েছিলেন বুকায়ো সাকা। কিন্তু খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছিল অফসাইডে ছিলেন ফডেন। সঙ্গে সঙ্গে পতাকা তুলে লাইন্সম্যানও সেই ইঙ্গিত দেন।

হ্যারি কেন প্রায় সব সময় স্লোভেনিয়ার ফুটবলারদের আড়ালে থাকলেন। জুড বেলিংহ্যামের অবস্থা আরও শোচনীয়। রিয়াল মাদ্রিদে বাঁ দিক থেকে ভেতরে ঢুকে প্রতিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলে দেন। ইংল্যান্ডের জার্সিতে না আছে তাঁর সেই চোরা গতি, না তাঁর পায়ে সেই জোরালো শট। বার বার ডিফেন্ডারদের জালে আটকে যাচ্ছিলেন বেলিংহ্যাম।

গ্যালাঘারের খেলা এতটাই খারাপ ছিল যে বিরতিতেই তাঁকে তুলে নিতে বাধ্য হলেন সাউথগেট। নামান কোবি মাইনুকে। তাতেও যে সুবিধা হয় এটা বলা যাবেই না। ম্যাচের ৭০ মিনিটে একটি পরিসংখ্যান দেখানো হয়। দেখা যায় ইংল্যান্ডের বল পজেশন ৭১ শতাংশ। পাস খেলেছে ৫৫৬টি। সাড়ে পাঁচশোর উপর পাসের মধ্যে ক’টি বিপক্ষের বক্সের মধ্যে খেলা হয়েছে, তা মাঠে থাকা যে কোনও সমর্থকই গুনে বলে দিতে পারতেন। দ্বিতীয়ার্ধেও ইংল্যান্ডের মানসিকতা ছিল গোল হজম না করার। শুধু স্কোয়্যার পাস এবং ব্যাক পাসে খেলা চলছিল। হ্যারি কেন খালি চেষ্টা করছিলেন কোনও ভাবে যাতে বক্সের মধ্যে পেনাল্টি আদায় করা যায়। বার বার পড়ে যেতে দেখা গেল ইংরেজ অধিনায়ককে।

অন্য ম্যাচে, ডেনমার্ক এবং সার্বিয়ার বিরুদ্ধে খেলাও গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়েছে। তবে গোটা ম্যাচে ডেনমার্কের আক্রমণ অনেক বেশি ছিল। ১০টি শট মেরেছে তারা। কিন্তু গোল করতে পারেনি। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন অল্পের জন্য একটি সুযোগ নষ্ট করেন। ডেনমার্কের জোয়াকিম অ্যান্ডারসেন আত্মঘাতী গোল করে ফেলেছিলেন। কিন্তু বিপক্ষের খেলোয়াড় অফসাইডে থাকায় সেই গোল বাতিল হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.