আমনজ্যোৎ কৌরের শট বাউন্ডারিতে পৌঁছতেই মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে তুললেন হরমনপ্রীত কৌর। ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলেন কোচ অমল মুজুমদারকে। বাকি ক্রিকেটারেরা তত ক্ষণে ছুটেছেন মাঠের ভিতর। মাঠে তখন হাঁটু মুড়ে বসে জেমাইমা রদ্রিগেজ়। দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছেন। তাঁকে ঘিরে বসে রয়েছেন সতীর্থেরা। তাঁদেরও চোখ শুকনো নেই। বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। জেমাইমা, হরমনপ্রীত, মন্ধানাদের চোখে দেখা গেল জয়ের অশ্রু।
হবে নাই বা কেন? বার বার হতাশা দেখেছেন হরমনপ্রীত। ২০১৭ সালের বিশ্বকাপে একার কাঁধে এই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। ফাইনালে জেতা ম্যাচ হারেন। ২০২২ সালের ফাইনালেও একই হাল হয়েছিল। এ বার তো তিনি অধিনায়ক। হয়তো শেষ বার বিশ্বক্রিকেটে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেখানেও একটা সময় সেমিফাইনালে ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কোনও রকমে সেমিফাইনালে উঠলেও সামনে ছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই অস্ট্রেলিয়া, যারা বিশ্বকাপে শেষ ১৫টা ম্যাচ জিতেছে। তাদের হারানো মুখের কথা ছিল না।
তার উপর প্রথমে ব্যাট করে ৩৩৮ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এক দিনের ক্রিকেটে এর আগে ভারতের সর্বাধিক রান তাড়া করে জয় ছিল ২৬৫। ফলে এই ম্যাচ যে ভারত জিতবে সেই আশা কম ছিল। সেটাই করে দেখালেন হরমনপ্রীতেরা। রান তাড়া করতে নেমে ৮৯ রান করলেন তিনি। জেমাইমা ও তাঁর জুটিতে ভর করে জিতল ভারত।
সেমিফাইনালের আগে হরমনপ্রীতের একটি ভিডিয়ো দেখানো হচ্ছিল সম্প্রচারকারী চ্যানেলে। সেখানে তিনি বলেন, “হারতে হারতে হাঁপিয়ে উঠেছি। এ বার জিততে হবে।” হরমনপ্রীতকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বুকের মধ্যে চেপে থাকা পাথরটা সরে গেল। তাই হয়তো বেরিয়ে এল ভিতরের আবেগ।
জেমাইমার কাহিনি অন্য। গত বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাননি। এ বার পেলেও শুরুটা ভাল হয়নি। প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। পর পর তিন ম্যাচে রান না পাওয়ায় এক ম্যাচে প্রথম একাদশের বাইরে ছিলেন। তাই প্রত্যাবর্তনের পর জবাব দেওয়ার মঞ্চ হিসাবে সেমিফাইনালকে বেছে নিলেন জেমাইমা। করলেন ম্যাচ জেতানো ১২৭ রান।
নবি মুম্বই জেমাইমার ঘরের মাঠ। ছোট থেকে এই মাঠে খেলেছেন। সেমিফাইনাল দেখতে এসেছিলেন তাঁর বাবা-মা। ৫০ ওভার ফিল্ডিং করার পর প্রায় ৫০ ওভার ব্যাট করলেন জেমাইমা। একটা সময় তাঁর শরীর দিচ্ছিল না। বোঝা যাচ্ছিল, তিনি পারছেন না। তা-ও হাল ছাড়েননি। নিজেকে টেনে নিয়ে যান। তাঁকে সমর্থন করেন দর্শকেরা। জেমাইমার প্রতিটি রানে চিৎকার বাড়ছিল গ্যালারিতে। দলকে জেতানোর পর তাই আর নিজেকে সামলাতে পারেননি জেমাইমা। যে সমর্থন তিনি পেয়েছেন, তার জন্য হাত জোড় করে দর্শকদের ধন্যবাদ জানান। তখনও চোখে জল ছিল তাঁর। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলান জেমাইমা।

