হরভজনরা চেয়েছিলেন পাক ম‍্যাচ না খেলে পহেলগাঁওয়ের প্রতিবাদ! পাকিস্তানকে দুরমুশ করে মাঠে ‘বদলা’ নিল ভারত

ফুলস্টপ!

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা এবং পাল্টা হিসাবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর এই দাবিই তুলেছিলেন হরভজন সিংহ। না ক্রিকেট, না বাণিজ্য— পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কোনও রকম সম্পর্কই দেখতে চাননি তিনি। বাণিজ্য এখনও শুরু হয়নি। ক্রিকেট হল। এবং ক্রিকেট ম্যাচেও ‘বদলা’ নিল ভারত। শুধু ‘বদলা’ নয়, একেবারে দুরমুশ করে বদলা। রবিবার দুবাইয়ে ভারত জিতল সাত উইকেটে। পড়শি দেশের তোলা ১২৭/৯ ভারত টপকে গেল ২৫ বল বাকি থাকতেই। পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ নয়, আদতে হল ‘মিস্‌ম্যাচ’।

পাকিস্তানকে পুরোপুরি বয়কট করুক ভারত, এমনটাই চেয়েছিলেন হরভজন। তিনি একা কেন, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে খ্যাতনামী, অনেকেই চেয়েছিলেন এই ম্যাচ না হোক। হরভজন নিজে উল্লেখ করেছিলেন লেজেন্ডস লিগের কথা, যেখানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দু’বার ম্যাচ খেলতে অস্বীকার করে নাম তুলে নেয় ভারত। রবিবারের এই ফলাফলের পর কোনও পক্ষই অখুশি থাকবেন বলে মনে হয় না।

টসে জিতে পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন আঘা ব্যাটিং নেওয়ার কথা জানিয়ে, সঞ্চালকের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে গেলেন। সূর্যকুমার যাদব হাত মেলানোর উৎসাহই দেখাননি। সঞ্চালকের প্রশ্নে শুরুতেই বলে দিলেন, “আরে, আমরা তো বোলিংই নিতে চাইছিলাম। টসে জিতলেও বোলিংই নিতাম।” অর্থাৎ ভারতের পরিকল্পনা ঠিক কী, তা অধিনায়ক স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ম্যাচের আগেই। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনার ছাপই দেখা গেল।

শুরুতে চার ওভারে দুই পেসার, মাঝের দিকে স্পিনার— এই ছিল ভারতের পরিকল্পনা। চেনা এই ছক বুঝতে গিয়েও হিমশিম খেল পাকিস্তান। বিপক্ষের কারা খেলবেন, তাঁরা কেমন বল করেন, কী ভাবে তাঁদের মোকাবিলা করা যাবে— আধুনিক ক্রিকেটে এই তথ্যগুলি জানা পাকিস্তানের কাছে কঠিন কাজ ছিল না। তবে ব্যাটিংয়ের সময় পাকিস্তানকে দেখে মনে হল ক্লাসের সেই ছাত্র, যে পড়াশোনা করে এসেও পরীক্ষার হলে সব গুলিয়ে ফেলেছে।

এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার আগে থেকেই বিশেষজ্ঞেরা বলে দিয়েছিলেন, ভারত-পাকিস্তানের এই ম্যাচ একপেশে হবে। ভারতীয় দলের যা মান, তার সামনে দাঁড়াতে পারবে না পাকিস্তান। ম্যাচ যত এগোল, তত এই কথার সত্যতা বোঝা গেল। ক্রিকেটের সাধারণ শিক্ষা, বোলিংয়ের সময় বিপক্ষ চাপে রাখলে ঠান্ডা মাথায় ক্রিজ় কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। টি-টোয়েন্টিতে বেশি ক্ষণ ক্রিজ়‌ কামড়ে থাকার সুযোগ কমই পাওয়া যায়। তবে কয়েকটি বল কাটিয়ে দিতে পারলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। পাকিস্তানের মধ্যে সেই ইচ্ছেটাই দেখা গেল না।

শুরু থেকে একের পর এক খারাপ শট। সাইম আয়ুব থেকে মহম্মদ হ্যারিস, সলমন আঘা থেকে হাসান নওয়াজ়‌, কেউ বাদ গেলেন না। যেন কে কতটা খারাপ শট খেলবেন তার প্রতিযোগিতা করছিলেন! পাকিস্তানের ব্যাটিং ব্যর্থতার পিছনে যতটা কৃতিত্ব ভারতীয় বোলারদের, ততটাই কৃতিত্ব পাকিস্তানের ব্যাটারদের। কুলদীপ যাদব, বরুণ চক্রবর্তীদের কাজ আরও সহজ করে দিলেন তাঁরাই। শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত ক্রিজ়‌ে ছিলেন সাহিবজ়াদা ফারহান। তিনিই একমাত্র সতীর্থদের মতো খারাপ শট খেলার দিকে ঝোঁকেননি। কিন্তু ক্রিজ়ে টিকে থাকতে গিয়ে এতটাই বেশি বল খেললেন যে পাকিস্তান রান রেট অনেকটা কমে গেল। শেষের দিকে সেই খারাপ শট খেলেই ফিরতে হল ফারহানকে।

তবু যে পাকিস্তান একশোর গন্ডি পেরোল, তার নেপথ্যে শাহিন আফ্রিদি। লম্বা-চওড়া এবং স্বাস্থ্যবান ক্রিকেটার। গায়ের জোরও বেশি। তাই ব্যাটে-বলে সংযোগ ঠিকঠাক হওয়ায় চারটি বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিলেন। হার্দিক পাণ্ড্যকে মারা একটি ছয় প্রায় আপার টিয়ারে গিয়ে পড়ল।

টসে জেতার সময় হয়তো সলমন ভেবেছিলেন পরের দিকে পিচ মন্থর হয়ে যাবে। ভারতকে দেখে মনে হল, তারা অন্য পিচে ব্যাট করতে নেমেছে। এই পিচে ঠিক কী ভাবে খেলতে হয় তার শিক্ষা পাকিস্তানকে দিয়ে দিল ভারত। বিপক্ষের সেরা বোলার শাহিনকে অভিষেক শর্মা স্বাগত জানালেন চার এবং ছয় দিয়ে। দলের সেরা বোলারই যদি প্রথম দু’বলে দশ রান দেন, তা হলে আত্মবিশ্বাস পড়ে যেতে বাধ্য। পাকিস্তানকে দেখেও সেটাই মনে হল। এই ম্যাচ যে তারা জিততে পারে, এটা দূর কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি পাকিস্তান।

অভিষেক ১৩ বলে ৩১ করলেন। রান হয়তো কম, তবে যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। তাঁকে ওপেন করতে পাঠানোই হয় পাওয়ার প্লে-র সুবিধা পুরোপুরি ওঠানোর জন্য। তাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কম স্কোরের ম্যাচে এই ৩১ রানই গুরুত্বপূর্ণ। শাহিনকে ৮৫ মিটার ছয় মেরে তাঁর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়ে দিলেন। তা থেকে আর গোটা ম্যাচে বেরোতে পারলেন না শাহিদ আফ্রিদির জামাই। দু’ওভার করার পর তাঁকে আর বল করতে আনাই হল না।

দু’টি উইকেট হারানোর পর তিলক বর্মা এবং সূর্যকুমারের কাজ ছিল ঠান্ডা মাথায় দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ভারতের জিততে তখন ৩৫ রান বাকি। ধারাভাষ্যকারেরা বলছিলেন, “এই পিচে কী ভাবে খেলতে হয় তার শিক্ষা পাকিস্তানকে দিচ্ছে ভারত। ধরার বল ধরো, মারার বল মারো। পাকিস্তান করেছে ঠিক উল্টোটা।”

সূর্যকুমারও সেটাই বোঝালেন। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অধিনায়কোচিত ইনিংস খেললেন। একাই যাবতীয় দায়িত্ব নিয়ে নিলেন নিজের ঘাড়ে। ছয় মেরে ম্যাচ শেষ করার যেন কেকের উপর চেরির মতোই।

পাকিস্তানের মধ্যে একজনেরই খেলা চোখে পড়ার মতো। তিনি আয়ুব। ব্যাট হাতে আবারও শূন্য রান করেছেন। কিন্তু বল হাতে তিনি চোখ টানলেন। শুভমন গিল গুগলি বুঝতে না পেরে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ফস্কালেন এবং স্টাম্পড হলেন। তিলক বর্মা ক্রিজ়‌ে জমে যাওয়ার পর আয়ুবের বলের ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে বোল্ড হলেন। ধারাভাষ্যকারেরা বলছিলেন, আয়ুবকে ব্যাটিং নয়, নিয়মিত বোলিংয়ে ওপেন করা উচিত। পাকিস্তান প্রতিভা চিনতে ভুল করে ফেলেছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.