যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন নিয়ে এ বার আদালতে যেতে পারেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন নিয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস এ বার আদালতে যাচ্ছেন বলে রাজভবন সূত্রের খবর।

বহু বিতর্কের মধ্যে রবিবার যাদবপুরে সমাবর্তনে চার হাজারেরও বেশি পড়ুয়া উপস্থিত থেকে ডিগ্রি সার্টিফিকেট নেন। অপসারিত অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউয়ের সই-করা ওই সব সার্টিফিকেট আইনত বৈধ নয় বলে মনে করছে রাজভবন।

রাজভবন সূত্রের খবর, বেশ কয়েক জন পড়ুয়া এবং অভিভাবক ইতিমধ্যেই সমাবর্তনের সার্টিফিকেটে বুদ্ধদেবের সই থাকা নিয়ে রাজ্যপালের কাছে ই-মেল করে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে এই সার্টিফিকেট নিয়ে তাঁরা বিপদে পড়বেন কি না সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তাঁরা। রাজভবন তাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার জন্য একটি কমিটিও তৈরি করেছে।

সমাবর্তনের ঠিক আগের দিন, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেবকে রাজ্যপাল অপসারণ করলেও উচ্চ শিক্ষা দফতরের অনুমতিক্রমে সমাবর্তন হয় এবং সমাবর্তন মঞ্চে নিজে উপস্থিত থাকেন বুদ্ধদেব। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের মত অনুযায়ী তিনি ডিগ্রি প্রাপকদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেননি। সেটি তুলে দিয়েছিলেন সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত। বুদ্ধদেব শুধু মঞ্চে থেকে সমাবর্তন শুরু এবং শেষের ঘোষণা করেন। তবে সমাবর্তনের সার্টিফিকেটে সই রয়েছে বুদ্ধদেবেরই।

আমন্ত্রণ জানালেও এই সমাবর্তনে আসেননি রাজ্যপাল। শহরে এসেও সমাবর্তনে আসেননি প্রধান অতিথি হিসেবে যাঁর উপস্থিত থাকার কথা ছিল, ইউজিসি-র সেই চেয়ারম্যান এম জগদেশ কুমারের।

রাজভবন সূত্রের খবর, সমাবর্তন করার জন্য উচ্চ শিক্ষা দফতরের সবুজ সঙ্কেত, সহ-উপাচার্যের ডিগ্রি প্রাপকদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া এবং সেই সার্টিফিকেট বুদ্ধদেবের সই থাকা— এই বিষয়গুলি নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্য আইনি পরামর্শ নিয়েছেন। মতামত নিয়েছেন অন্য অন্তর্বর্তী উপাচার্য এবং শিক্ষাবিদদেরও। রাজভবন জানিয়েছে, সেই মতামতে উঠে এসেছে, এ ভাবে সমাবর্তন করা সম্পূর্ণ বেআইনি।

রাজভবনের দাবি, কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের বিষয়ে আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকার কিছু বলতে পারে না। আইন অনুযায়ী সমাবর্তনে সহ-উপাচার্যেরও কোনও ভূমিকা থাকার কথা নয়। উপাচার্যের অবর্তমানে তাঁর কাজের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে পারেন একমাত্র আচার্য। তবে উপাচার্য যদি পদে থাকেন, সেই ক্ষেত্রে তাঁর অধীনস্থ অন্য কাউকে তিনি দায়িত্ব দিতে পারেন। এবং এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আইন অনুযায়ী নিযুক্ত উপাচার্য অথবা আচার্য মনোনীত অন্তর্বর্তী উপাচার্য তা করতে পারেন।

কিন্তু যাদবপুরের ক্ষেত্রে বিষয়টি তা ছিল না। আচার্য আগেই অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে অপসারণ করে দিয়েছিলেন। রাজভবনের দাবি, আইনজ্ঞদের মত, কোর্ট-বৈঠকও আইন মেনে হয়নি। তাই সমাবর্তনে সহ-উপাচার্যকে দিয়ে ডিগ্রি দেওয়ানো আইনসম্মত হয়নি। এবং সেই ডিগ্রি সার্টিফিকেটে অপসারিত অন্তর্বর্তী উপাচার্যের স্বাক্ষরও বেআইনি। রাজভবন মনে করছে, যে ডিগ্রি সার্টিফিকেট পড়ুয়ারা পেয়েছেন তা অবৈধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.