সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ছোটবেলায় বেশ দুরন্তপনা ছিল,ছড়ার বই মুখস্ত হয়ে গেলে ছিঁড়ে ফেলতেন,সিমেন্টের মেঝেতে খড়ি দিয়ে অঙ্ক করতেন৷
১৯৫৯সালের এক ঘটনা জাতীয় অধ্যাপকের বিরল সন্মান পেয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ, এক মাসের মাইনে নিয়ে সবে এসেছেন৷ এক গরিব বাবা তাঁর মেয়ের বিয়ের জন্য সাহায্য চাইতে এলেন৷ সত্যেন্দ্রনাথ বিনা দ্বিধায় আলমারি খুলে মাইনের পুরো টাকাটা ওই কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার হাতে তুলে দিয়ে হেসে বললেন ‘নিশ্চিন্তমনে মেয়ের বিয়ে দাও৷ আমাকে লুচি দিতে ভুলো না’৷
সাহায্যপ্রাথী মানুষটি ‘আপনি দেবতা’ আপনি দেবতা’ বলতে বলতে চলে গেলেন৷
সাহিত্যিক প্রতিভা বসু লিখেছেন যখন সত্যেন্দ্রনাথ ঢাকায় ছিলেন তখন এক মণ সরু চালের দাম চার টাকা,চার আনার বাজার করলে একটা পরিবারের মাছ-তরকারি ভাল ভাবে হত৷ তখন কেউ পাঁচশো টাকা বেতন পেলে গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়াতে পারতেন, সত্যেন্দ্রনাথ বসুর বেতন তখন বারোশো টাকা৷
বিরাট অঙ্কের বেতন বারোশো টাকা সেই সময়ের প্রেক্ষিতে৷ হলে কি হবে সেই টাকায় বিজ্ঞানী নিজের পরিবার প্রতিপালন করে সঞ্চয় করতে পারতেন না৷ বহু ছাত্র,অনেক দরিদ্র অভাজন অংশীদার হতেন তাঁর উপার্জনে৷ যার প্রয়োজন হত সত্যেন্দ্রনাথ তাঁকে সাহায্য করতেন৷ এবং সেই সাহায্যে কোনও সাড়ম্বর ঘটনাও ছিল না৷ যেন সেটা স্বতঃসিদ্ধ,সেটাই নিয়ম৷ কখনও মনে রাখতেন না কাকে কী দিলেন৷
‘ঝিলমিল’ গ্রন্থে ধূর্জটিপ্রসাদ লিখেছেন কেউ বিপদে পড়লে বিজ্ঞানীর চোখ ছলছলিয়ে উঠেছে,বন্ধুর ভাই যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত তাঁকে হাসপাতালে তুলে এনেছেন৷ কত লোককে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন৷????
মাইনে সত্যেন্দ্রনাথ কম পেতেন না,তবু টাকা ফুরিয়ে যেত৷ যাবে না কেন? কারণ নিজের পরিবার প্রতিপালন করে বাকি টাকা যে তিনি মানুষকে দিয়ে দিতেন নিঃশব্দে,নীরবে৷ আর সেই কারণে তাঁকে ধার করতে হত৷ সেই নিয়ে বিজ্ঞানীর পিতৃদেব বৃদ্ধ বয়সে বেশ চিন্তিত ছিলেন এত ধার করছে ছেলে,এর ভবিষ্যত কী হবে!খুব সত্যি কথা হল সত্যেন্দ্রনাথের কাছ থেকে সারাজীবনে কত মানুষ উপকার পেয়েছেন সেই তালিকা সংখ্যায় প্রকাশ কার্যত অসম্ভব৷ নিজে কাউকে কিছু বলেন নি,ছাত্ররা সেসব পাশ থেকে দেখেছেন৷
সবাই জানেন যে ‘বোসন’ কণা নিয়ে এত আলোচনা হয় পদার্থবিদ্যায়, তাঁর নামকরণ হয়েছে সত্যেন্দ্রনাথের নামানুসারেই। একবার সত্যেন বোস বেশ মজার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, সেকথা অবশ্যই উল্লেখ করার প্রয়োজন৷ দিল্লিতে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন৷ সভাপতি সত্যেন্দ্রনাথ বসু৷ নৈশভোজে বড়লাট ওয়েভেল সাহেব সব বিজ্ঞানীদের আমন্ত্রন জানিয়েছেন৷ নিঃসন্দেহে সত্যেন বসু সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু৷ অথচ তাঁর দেখা নেই৷ রাত ন’টা বিজ্ঞানীর পাত্তা নেই৷ সেদিন তাহলে তিনি কোথায় গিয়েছিলেন ? আসলে দুপুরবেলা হিন্দু স্কুলের এক বন্ধুর সাথে তাঁর দেখা হয়েছিল৷ কতদিন পরে দুই বন্ধুর দেখা,দিব্যি চলে গেলেন তাঁর বাড়ি৷ দুপুরে খেলেন৷ গল্পগুজব হল বেশ,রাতেও বন্ধুর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে ফিরলেন৷ পরদিন লেডি ওয়েভেল কারণ জানতে চাইলে জবাব দিয়ে দিলেন৷
বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা..
সংকলনে অরুণাভ সেন
কৃতজ্ঞতা স্বীকার ~ সত্যেন্দ্রনাথ বসু,শ্যামল চক্রবর্তী
Credit : এক যে ছিলো নেতা