মনু স্মৃতির দশম অধ্যায়ের ৬৫ তম শ্লোক থেকে বুঝলাম, মনু জানতো মানুষের জিন কি করে উন্নত হয়। মনু মহা জ্ঞানী ছিলেন! আমি গর্বিত আমি হিন্দু।

মনুর আমলে নানা বর্ণে বিয়ে হতো, যা সমুদ্রগুপ্তর আমল থেকে বন্ধ হয়েছে। মনু আমলে ব্রাম্মন বলতে বোঝানো হতো, যারা যথেষ্ট জ্ঞানী মানে ব্রম্মান্ডের নানা বিষয়ে যাদের জ্ঞান আছে। এখানে বলে রাখি, মনু সংহিতা বা মনু স্মৃতি হলো মনুর আমলে প্রচলিত সামাজিক নিয়ম। আরও বলে রাখি, সনাতন ধর্মে সময়ের সাথে সাথে সামাজিক নিয়ম পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য বলেই, মনু সংহিতার পরেও আরও ৩ বার সংহিতা লিখিত হয়েছে, শেষ সংহিতার নাম পরাশর সংহিতা। কাজেই মনু আমলের সংহিতার সব নিয়ম আজকের দিনে প্রযোজ্য নয় এবং আজকের সমাজপতি বা বিজ্ঞানীরা রা চাইলেই নতুন সংহিতা লিখতে পারে। ভারতের শিক্ষা ব্যবসায় বা ব্যবস্থায় বা হিন্দু ধর্মে কোনো প্রফেসর/এক্সপার্ট চেয়ার নেই, যাদের কাজ হলো পুরানো শাস্ত্রের সময়উপযোগী ভাষায় ও অর্জিত বিজ্ঞানের জ্ঞানের নিরীখে ব্যাখ্যা করা ও সংহিতার নতুন সংস্করণ বের করা। কারণ এসব করতে পারে তারাই, যারা ধর্ম শিখেছে ও সরকারি বা ধর্মীয় সংগঠনের বেতনে এই সব জ্ঞানের চর্চা করতে পারে। কংগ্রেস আমাদের সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমি নেহেরু ও আম্বেদকর কে কে ঘৃণা করি, স্কুলে সরকারি খরচে হিন্দুদের ধর্ম শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেবার জন্য।

আমরা জানি, ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হলে বিকলাঙ্গ সন্তানের সৃষ্টি হবে এক সময়, ফারাও দের অনেক সন্তান বিকলাঙ্গ হয়েছে, ভাই বোনের মধ্যে বিয়ের কারণে, যেমন Tutanchamun এর সন্তান । বিজ্ঞান বলেছে, জিনের উন্নত সংস্করণের জন্য আমাদের নানা জাতের ( পেশার ) মানুষের মধ্যে বিয়ে হওয়া দরকার। হয়ত সে ক্ষেত্রে প্রায় ১% সন্তান এর জীন অনুন্নত হবার সুযোগ থাকে । হিন্দুরাও সেটা মানে। তাই একই গোত্রের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ। বলা হয় ৪৯ এর বেশি গোত্র আছে। আমি হিন্দু বিদ্বেষী-নেহেরুর কারণে আমার ধর্ম জানার সুযোগ পাইনি বলে সঠিক গোত্র সংখ্যা বলতে পারলামনা, এজন্য আমি লজ্জিত, আমাদের ধর্মপ্রধান থাকলে সে আমাদের সঠিক তথ্য দিতো। হিন্দু ধর্মে গোত্র বা clan বলতে বোঝানো হয়, কোন মুনি ঋষির বংশধর।

আমরা যে জীন বংশের সূত্রে পাই, তার অধিকাংশ মায়ের থেকে আসে। কার দেহে কোন জীন বাবা মা মায়ের থেকে আসবে বলা যায়না। তবে ১৫০ টা জীন তখন আমাদের দেহে সক্রিয় থাকে যদি মা বা বাবার থেকে আসে। যদি নির্দিষ্ট জীন বাবা বা মায়ের থেকে না আসে, তখন তার কার্যকারিতা আমাদের দেহে নিষ্ক্রিয় থাকে। বিজ্ঞান বলে intelligence জিন মায়ের থেকেই আসে। যে জাতি নারীকে শিখতে বাধা দেয় , সেই জাতি “রাক্ষস বা মাফিয়া ” জাতিতে পরিণত হয়।

“ব্রাম্মন” হতে হলে মা কে জ্ঞানী হতেই হবে, কারণ মায়ের থেকেই জ্ঞানের জন আসে। জিনের mutation হয়। কাজেই মা যত জ্ঞানী হবে, সন্তানের ব্রম্মন ( জ্ঞানী) হবার সুযোগ তত বেশী। জ্ঞানী হতে হলে বাড়ির পরিবেশ ও বাড়ির জ্ঞান চর্চা একটা বড় রোল প্লে করে। শূদ্র পরিবারে ( যারা কায়িক পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে) জ্ঞান চর্চার সুযোগ কম থাকে অর্থনৈতিক কারণে। আর যে জ্ঞানী সে কখনোই কায়িক পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হয়না, সে জ্ঞান চর্চার সময় ও সুযোগ বেশি পায়। আমরা জানি, বৈদিক যুগে মানুষ জন্মের পর নিজের জ্ঞান, আগ্রহ ও পছন্দ মত বর্ণ ( পেশার মূল ক্যাটাগরি) গ্রহণ করতো। প্রায় ১৭০০ বছর পূর্বে সমুদ্র গুপ্তের আমলে বংশ পরম্পরায় একই পেশা চর্চা করার নিয়ম চালু হয়েছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে। আজকের মত সেই আমলেও “ব্রাম্মন” পরিবারে আর্থিক সঙ্গতি ভালো ছিল জ্ঞান বেশি থাকার জন্য। আজকের দিনের অনেক ব্রাম্মন পদবীর নাগরিক রা ভাবে, তাদের যেহেতু বন্ধ পরম্পরায় ব্রাহ্মণ পরিবারে বিয়ে হয়েছে, কাজেই তাদের জীন উন্নত। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটা সত্য নয়। কারণ এদের জিনের ভেরিয়েশন তৈরী হবার সুযোগ হয়নি। সমুদ্র গুপ্তের সময় থেকেই হিন্দুদের জিনের অধঃপতন শুরু হয়েছে, একই পেশার মধ্যে বিয়ে হবার কারণে।

মনু স্মৃতির দশম অধ্যায়ের ৬৫ তম শ্লোকে লেখা আছে, যদি কোনো “ব্রাম্মন” ও ৭ পুরুষ ধরে “শূদ্র” ( কম জ্ঞানী -যারা কায়িক পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে) তা হলে তাদের সন্তানের মেধা কমে যাবে অর্থাৎ শূদ্র প্রকৃতির হবে। শূদ্র নারী কে যদি ক্ষত্রিয় বিয়ে করে ও তাদের কোন সন্তান এভাবে ৫ পুরুষ ধরে ক্ষত্রিয় বিয়ে করে, তখন সেই সন্তানের মধ্যে “ক্ষত্রিয়” গুন্ বা জিন বহন করবে। তেমনি ক্ষত্রিয় যদি ৫ পুরুষ ধরে কেবল শুভ্র নারী বিয়ে করে, তখন নেই নারীর সন্তান শূদ্র জিনের মানে কম জ্ঞানের হবে। একই ভাবে শূদ্র নারী যদি ৩ পুরুষ ধরে বৈশ্য পুরুষ বিয়ে করে, তখন তার সন্তানের জিনে বৈশ্য জিনে কনভার্ট হবে, আর ব্রাম্মন এর সাথে বৈশ্য বা ক্ষত্রিয় র বিয়ে হলে আরও দ্রুত ব্রাম্মন জীন সন্তানের মধ্যে আসবে। আপনারাও মন দিয়ে পড়ুন।

এবার প্রশ্ন আসে, মনু কি অবৈজ্ঞানিক কথা বলেছে? আমার সেটা মনে হয়না।আজকের হিন্দু বিরোধীরা বিজ্ঞান বোঝেনা ও মানেনা। যারা মনুর এই নিয়মের বিরোধিতা করে, তারা কি বিজ্ঞানসম্মতভাবে গবেষণা করে নতুন কোনো তথ্য পেয়েছে? না পায়নি। এরা গবেষণা করেনি ও মনু সংহিতা পড়েনি বা পড়লেও জ্ঞানের অভাবে বোঝেনি। রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণে হিন্দুদের ছোট করে ধর্মান্তরিত করার জন্যই বর্ণ বা মনুসংহিতা নিয়ে অপপ্রচার করে , আর হিন্দুরা মূর্খ বলে, নিজেদের ধর্ম জানেনা বলে, এই অপপ্রচার বিশ্বাস করতে শুরু করে। মনুর বক্তব্য জীবন বিজ্ঞান বিরোধী নয়। আর যদি হয়, সেটা প্রমান করার দায়িত্ব যারা এর বিরোধিতা করে।

কিভাবে এক বর্ণ থেকে অন্য বর্ণে বিয়ের মাধ্যমে উন্নত বা অনুন্নত জিনের বংশধর সৃষ্টি করা যায়, হাজার হাজার বছর পূর্বে মনু লিখে গেছে। আর ১৮৬৬ সালে Gregor Mendel জীন তত্ব আবিষ্কার করে আমাদের শেখে দেখেয়িছে । আসুন মনু কে প্রণাম করে তার কাছে ক্ষমা চাই।

আমি সময় করে সমগ্র মনু স্মৃতি পড়ে এক সময় সেই সময়ের ও বর্তমানের সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইকোলজি ও মনোবিদ্যা র নিরীখে বিশ্লেষণ করার আগ্রহ রাখি। এই কাজ একা করা যায়না। আমি জানিনা , মনুর সংস্কৃত শ্লোকের সঠিক বাংলা অনুবাদ হয়েছে কিনা। আমাদের দরকার নানা বিষয়ের স্পেশালিস্ট।

মনুর আমলের সে সব সামাজিক সংস্কার ছিল, আমি হিন্দু হিসাবে এই আমলে মানতে বাধ্য নই। আমি গর্বিত আমি হিন্দু। মনু আমার নমস্য।

লেখার সমালোচনা যুক্তি প্রমান দিয়ে গ্রহণযোগ্য।

মৃণাল মজুমদার, বার্লিন, ১৫.০৫.২০২৫

লিংক মনু স্মৃতি : https://archive.org/details/ajoymondol297_gmail_20160623_1852/page/880/mode/2up

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.