নিটের প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া, সবই সিবিআইয়ের আতসকাচের তলায়

নিটে প্রশ্ন ফাঁস-সহ একাধিক অনিয়ম, আবার নেটেও অনিয়মকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছে। তদন্ত যত এগোচ্ছে, সামনে আসছে নানা অসঙ্গতি। বাড়ছে গ্রেফতারির সংখ্যাও। তার জেরে অনেকেরই প্রশ্ন, নেটের মতো নিটও কেন বাতিল করা হবে না? ইতিমধ্যেই নিটের প্রশ্ন ফাঁসে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিবিআই-কে। বিহার, গুজরাত ও রাজস্থান পুলিশের দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।

সিবিআই সূত্রে খবর, চার দফায় তদন্ত চলবে। প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপানো থেকে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে সেই প্রশ্ন পৌঁছে দেওয়ার বিভিন্ন স্তর খতিয়ে দেখা হবে। এর পাশাপাশি সিবিআই খতিয়ে দেখছে, পরীক্ষার প্রস্তুতি, প্রশ্ন ছাপানো, প্রশ্ন পৌঁছে দেওয়া এবং পরীক্ষা শুরুর আগে বিভিন্ন কেন্দ্রে নিরাপদ ভাবে প্রশ্নপত্র রাখার ক্ষেত্রে কোথাও কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না। যদি হয় সে ক্ষেত্রে কে বা কারা তাতে জড়িত।

প্রাথমিক ভাবে সিবিআইয়ের তথ্যভান্ডারে রয়েছে সন্দেহভাজন হাজারখানেক নাম ও ফোন নম্বর। তার মাধ্যমেই দেখা হবে কারা প্রশ্ন ফাঁস করেছে! ব্যপমের মতো বিভিন্ন পরীক্ষা দুর্নীতিতে জড়িত কিংবা সন্দেহভাজনদের নিয়েই তৈরি হয়েছে ওই তথ্যভান্ডার। যাতে শিক্ষা দুর্নীতির চক্র সামনে আনা যায়।

গুজরাতের গোধরায় ৫মে নিট পরীক্ষার দিন নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ-সহ একাধিক অভিযোগ দায়ের হয় গোধরা পুলিশের কাছে। অভিযোগ ২৭ জন পরীক্ষার্থীর নিট উত্তীর্ণের জন্য নানা অসদুপায় অবলম্বন করা হয়েছিল। আজ পাঁচমহলের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের একটি দল গোধরা পৌঁছে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁদের সমস্ত সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা জালারাম স্কুলও ঘুরে দেখেন সিবিআই আধিকারিকেরা। ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অভিযোগ।

পড়শি রাজ্য মহারাষ্ট্রেও নিটের প্রশ্ন ফাঁসে যুক্ত থাকার অভিযোগ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। দুই শিক্ষক-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে মহারাষ্ট্র পুলিশ। শনিবারই লাতুরের ওই দুই শিক্ষক সঞ্জয় তুকারাম যাদব এবং জলিল পঠানকে আটক করা হয়। রবিবার ছেড়ে দেওয়া হলেও পরে গ্রেফতার করা হয়। এফআইআরে বলা হয়েছে, ধৃতেরা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা সংক্রাম্ত নানা তথ্য বিক্রি করতেন। ধৃত দুই শিক্ষকের ফোনে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, পরীক্ষা কেন্দ্র ও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত নানা তথ্য মিলেছে। এই তদন্তে উঠে এসেছে দিল্লি যোগও। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন গঙ্গাধর নামে দিল্লির এক বাসিন্দা। তিনিই সঞ্জয় ও উমরখানের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের যোগাযোগ করিয়ে দিতেন। সেখানে বিপুল অর্থের বিনিময়ে নিশ্চিত সাফল্যের আশ্বাস দেওয়া হত। এর আগে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বিহার পুলিশও চার জনকে গ্রেফতার করেছিল।

এ দিকে নিটের আয়োজক সংস্থা এনটিএ-র আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই ওএমআর-এ কারচুপির অভিযোগ তুলে সিবিআই ও ইডি তদন্তের আর্জি জানিয়ে মামলা হল সুপ্রিম কোর্টে। তবে বিচারপতি মনোজ মিশ্র এবং বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চ ওই আবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বলা হয়, অনুচ্ছেদ ৩২-এর আওতায় কী ভাবে এই আবেদন হতে পারে? হাই কোর্ট থেকে আবেদন প্রত্যাহার করে শীর্ষ আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথাও বলা হয়। আজ সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে এক মামলায় সিবিআই ও ইডি-কে নোটিস পাঠানোর আবেদন জানানো হলেও বিচারপতি এ এস ওকা জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে শুনানির প্রয়োজন নেই। ৮ জুলাইয়েই মামলার শুনানি হবে।

নিট-নেট জটে যখন কেন্দ্র জেরবার সেই সময়েই বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে চার ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রিন্টিং প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। অভিযোগ, এর নেপথ্যে চার ইঞ্জিনিয়ার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.