আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর ও তাঁর পুত্রকে গ্রেফতার করল দুর্গাপুর থানার পুলিশ। এক ব্যক্তিকে টাকা না দিয়ে দামি গাড়ি নেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে মানস রায় ও তার পুত্র অভ্রনীল রায়ের বিরুদ্ধে।
গাড়ি বিক্রেতা মহম্মদ আসিফের দাবি, তাঁর বোন ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর চিকিৎসার খরচের জন্য নিজের চারচাকা গাড়ি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন আসিফ। সেই মর্মে তিনি অনলাইনে একটি বিজ্ঞাপন দেন। তা দেখে মানস ও তার ছেলে অভ্রনীল তাঁর থেকে ওই গাড়িটি নেন। গাড়িটির দাম ছিল ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। অভিযোগ, দিনের পর দিন তাঁরা একাধিক ব্যাঙ্কের চেক দিয়েছিলেন আসিফকে, কিন্তু সবগুলি চেক বাউন্স করে। এখানেই শেষ নয়, দুর্গাপুরের বেনাচিতির এক মোবাইল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দু’টি দামি মোবাইল নিয়েছিলেন মানস। প্রায় দু’লক্ষ টাকা দাম ওই দু’টি মোবাইলের। অভিযোগ, শাসক দলের কোনও নেতাকে দেওয়ার নাম করে মানস ও তার ছেলে ওই দু’টি মোবাইল নিয়েছিলেন। এর পর ওই মোবাইলগুলির জন্য যত বার মানস ও তাঁর ছেলের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হত, তাঁরা বিভিন্ন ভাবে ওই ব্যবসায়ীকে হুমকি দিতেন। এই নিয়ে দুর্গাপুর থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করেন ওই ব্যবসায়ী। সেই মামলার ভিত্তিতে মঙ্গলবার তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার মানস ও অভ্রনীলকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হবে।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের গোপাল মাঠের বাসিন্দা ও দুর্গাপুর পুর নিগমের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর মানস। জানা গিয়েছে, বহু মানুষের কাছ থেকে দিনের পর দিন বিভিন্ন ভাবে টাকা আত্মসাৎ করেছেন অভিযুক্ত ও তাঁর ছেলে। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, “রাজনৈতিক কোনও বিষয় এখানে নেই। প্রতারণার মামলা রুজু হয়েছিল। সেই মতো দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার দুর্গাপুর আদালতে হাজির করানো হবে। বর্তমানে তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রয়েছে কি না জানি না।” এই বিষয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ কিছু বলতে চাননি।
অন্য দিকে, বিজেপি নেত্রী তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “এখানে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, তৃণমূল মানেই হচ্ছে চোর, তৃণমূল মানেই হচ্ছে দুর্নীতি, তৃণমূল মানেই হচ্ছে মানুষকে ঠকানো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতোই তাঁর দলের সকলে স্থানীয় মানুষদের ঠকাচ্ছেন। দল যে ভাবে শিখিয়েছে সেই ভাবেই তো মানস শিখেছেন। এত বছর ধরে মানুষদের ঠকিয়ে ঠকিয়ে যখন পারদর্শী হয়ে গিয়েছে তখন পুলিশ তাঁকে ধরে বলার চেষ্টা করছে এটা রাজনৈতিক কোনও বিষয় নয়।” অগ্নিমিত্রা আরও বলেন, “ডিসি আগের থেকেই এত নিশ্চিত হচ্ছেন কী ভাবে যে এটা কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়। উনি কি তৃণমূলকে বাঁচাতে চাইছেন?” তাঁর সংযোজন, “পুলিশ পুলিশের কাজ করুক না। এটা রাজনৈতিক না কি অরাজনৈতিক বিষয় সেটা আমরা ঠিক বার করে নেব।”