অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নায়ডুকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠাল আদালত। ‘অন্ধ্রপ্রদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ মামলায় শনিবার সকালে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র প্রধান চন্দ্রবাবুকে গ্রেফতার করার পর মধ্যরাত অবধি চলে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। তার পরেই রবিবার সকালে চন্দ্রবাবুকে পেশ করা হয় বিজয়ওয়াড়ার দুর্নীতি বিরোধী আদালতে। সন্ধ্যায় টিডিপি প্রধানকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর ঘোষণা করে আদালত।
রবিবার সন্ধ্যায় আদালত চত্বরে জনা ৩০ প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে এই নির্দেশ দেন দুর্নীতি বিরোধী আদালতের বিচারক। আগেই চন্দ্রবাবুর জামিনের আবেদন খারিজ করেছিলেন তিনি। আদালত সূত্রে খবর, আদালত চত্বর থেকে প্রথমে বিজয়ওয়াড়ার এসআইটি-র অফিসে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে সোমবার ভোরে রাজামুন্দ্রির জেলে পাঠানো হবে তাঁকে।
অন্ধ্রপ্রদেশের স্কিল ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত দুর্নীতি অভিযোগের তদন্ত করছে রাজ্যের গোয়েন্দা দল সিআইডি। তদন্তে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছিল তারা। শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে অ-জামিনযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
টিডিপি সূত্রে খবর, দলীয় কর্মসূচি উপলক্ষে অন্ধ্রপ্রদেশের নান্দিয়ালে ছিলেন চন্দ্রবাবু। একটি জনসভায় বক্য়াতৃতা করার পরে ভ্যানিটি ভ্যানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। শনিবার ভোররাতে সেখানেই হানা দেয় সিআইডি এবং অন্ধ্র পুলিশ। সঙ্গে ছিলেন নান্দিয়ালের ডিআইজি রঘুরামি রেড্ডি। সকাল ৬টা নাগাদ চন্দ্রবাবুকেকে গ্রেফতার করে ভ্যানিটি ভ্যান থেকে বার করে আনা হয়।
তবে তিনি যে শীঘ্রই গ্রেফতার হতে চলেছেন, সেই আশঙ্কা বহুবার প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন অন্ধ্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। গত মাসেই চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারায় এফআইআর করেছিল সে রাজ্যের পুলিশ। শুক্রবার, চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধে জনসাধারণের টাকা লুট করার অভিযোগ এনে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মেরুগা নাগার্জুন। এর পরেই শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সিআইডি।
সিআইডি সূত্রে খবর, যে ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ মামলায় চন্দ্রবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে অন্তত ২০টি প্রশ্ন করা হলে, তার একটিরও সদুত্তর দিতে পারেননি প্রবীণ এই রাজনীতিক। ৩৭১ কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ হিসাবে বেশ কিছু হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাটও চন্দ্রবাবুকে দেখিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। তারও উপযুক্ত জবাব দিতে পারেননি অন্ধ্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে অন্তত ১০ বছর জেলে থাকতে হতে পারে চন্দ্রবাবুকে। যদিও তাঁর গ্রেফতারিকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছে চন্দ্রবাবুর দল টিডিপি। তাঁদের বক্তব্য, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রধান তথা অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসনের অভিযোগ তুলে গত বছর থেকে ধারাবাহিক ভাবে জেলাওয়াড়ি যাত্রা শুরু করেছেন চন্দ্রবাবু। আগামী বছর লোকসভা ভোটের সঙ্গেই অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তাই বিরোধীদের দুর্বল করতে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। যদিও টিডিপির এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের তরফে বলা হচ্ছে, চন্দ্রবাবুর গ্রেফতারিকে অহেতুক ‘রাজনীতির মোড়ক’ দেওয়া হচ্ছে।