সিপিএম নেতা তন্ময়ের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভ করে হেনস্থার অভিযোগ মহিলা সাংবাদিকের, দলে শোরগোল

সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ আনলেন এক মহিলা সাংবাদিক। রবিবার দুপুরে ফেসবুক লাইভ করে ওই সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন, সকালে তিনি তন্ময়ের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন, সেই সময় সিপিএম নেতা তাঁর কোলে বসে পড়েন। ওই ফেসবুক লাইভ বিকেলের মধ্যেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে সমাজমাধ্যমে, যার জেরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে সিপিএমের অন্দরেও।

মহিলা সাংবাদিকের অভিযোগ, এর আগেও নানা ভাবে তন্ময় তাঁর সঙ্গে ‘অন্যরকম’ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আজ সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। এ নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে তন্ময়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি স্বভাবগত ভাবেই সকলের সঙ্গে ইয়ার্কি করি। এর আগে ওই মেয়েটি অন্তত দশ বার আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ওর সঙ্গে আমি এর আগেও ইয়ার্কি করেছি। কিন্তু আজকে হঠাৎ করে কী হল আমি জানি না।’’

আরজি কর আবহে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে নাগরিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তাতে নেপথ্যে থেকে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিল সিপিএম। সমাজমাধ্যমে সিপিএমের নেতা-কর্মীরা নানা ধরনের পোস্ট করেছেন। তন্ময়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে তাঁরাও অনেকে নেমে পড়েছেন প্রতিবাদে। সিপিএমের পার্টি সদস্য থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মুখেরা প্রকাশ্যে দাবি তুলতে শুরু করছেন, তন্ময়ের বিরুদ্ধে অবিলম্বে দলকে ব্যবস্থা নিয়ে হবে। যার ফলে চাপ তৈরি হয়েছে আলিমুদ্দিনের উপরেও।

সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্যতম দায়িত্বে রয়েছেন সুজন চক্রবর্তী। তন্ময় নিজে দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটিতে আমন্ত্রিত সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে মহিলা সাংবাদিকের অভিযোগ প্রসঙ্গে সুজন বলেন, ‘‘আমি ওই ফেসবুক লাইভ দেখেছি। দেখে খারাপ লেগেছে। কিন্তু আমরা অন্য দলের মতো নই। মনে রাখতে হবে, সাম্প্রতিক অতীতে চারিত্রিক কারণে আমরা যাকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করেছি, তাকে তৃণমূল নেতা করেছে।’’ তন্ময়ের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ হবে? সুজনের জবাব, ‘‘আমাদের পার্টিতে কিছু প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়া মেনেই আমরা যা পদক্ষেপ করার করব।’’

তন্ময় ছিলেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি। ঘটনাচক্রে যে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন মিনাক্ষি মুখোপাধ্যায়। ব্যক্তিগত ভাবে তন্ময় ছিলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মচারী। বেশ কয়েক বছর হল তিনি অবসর নিয়েছেন। ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত উত্তর দমদমের বিধায়ক ছিলেন তন্ময়। পরাস্ত করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে। তবে ২০২১ সালে চন্দ্রিমার কাছেই পরাজিত হন তন্ময়। সম্প্রতি বরাহনগর বিধানসভা উপনির্বাচনে দাঁড়িয়েও তন্ময় হেরেছিলেন। অতীতে কংগ্রেসের সঙ্গে সখ্য, দলের নির্দেশ অমান্য করে কংগ্রেসের মিছিলে চলে যাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে দলের মধ্যে তন্ময়কে নিয়ে বিতর্ক ছিল। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার গোষ্ঠী রাজনীতিতেও তন্ময় অন্যতম একটি নাম। দলের সম্মেলন প্রক্রিয়া যখন আসন্ন, তখন সেই তন্ময়ের বিরুদ্ধেই হেনস্থার অভিযোগ আনলেন মহিলা সাংবাদিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.